তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়া ব্যর্থতা বলা যাবে না, বললেন সুষমা স্বরাজ

তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়া ব্যর্থতা বলা যাবে না। তা ছাড়া সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হতে এখনো একটা বছর বাকি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছেন। দিল্লির জনপথে জওহরলাল নেহরু ভবনে আজ সোমবার এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সুষমা এ কথাও বলেন, রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের প্রতি ভারত সহানুভূতিশীল—এমন প্রচ্ছন্ন অনুযোগ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কেউ তাঁকে করেননি।

গত সাত বছর ধরে তিস্তা চুক্তি অধরা রয়ে গেছে। এই সাত বছরের মধ্যে চার বছর কেটে গেল নরেন্দ্র মোদির সরকারের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর মোদি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, তাঁর ও হাসিনার সরকারের মেয়াদ পূর্তির আগেই তিস্তা চুক্তি সম্পাদিত হবে। হায়দরাবাদ হাউসে সেই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও উপস্থিত ছিলেন। সে কথা স্মরণ করিয়ে সুষমাকে প্রশ্ন করা হয়, সরকারের অনেক সাফল্যের মধ্যে অধরা তিস্তা ছোট্ট এক ব্যর্থতা কি না।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সুষমা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ—এই দুই সরকারের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তিস্তার পানি যেটুকু যাবে, সেটা যাবে ওই রাজ্য থেকেই। কাজেই তাদের মতামত ও অনুমতি একান্তই জরুরি। তিস্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়। তিস্তার বিকল্প হিসেবে মমতা অন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাবে রয়েছে অন্য তিন নদী। মমতা বলেছিলেন, তিস্তার বদলে ওই তিন নদীর পানি বাংলাদেশ নিক। তাতে তাঁদের পানির সমস্যা মিটবে। সুষমা বলেন, ওই বিকল্প প্রস্তাব কার্যকর ও বাস্তবায়িত করা সম্ভব কি না, তা কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই প্রতিবেদন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ কথা বলার পরেই সুষমা বলেন, সরকারের বয়স মাত্র চার পূর্ণ হলো। মেয়াদ শেষ হতে এখনো একটা বছর বাকি আছে। তাই তিস্তা চুক্তি না হওয়াকে এখনই সরকারের ব্যর্থতা বলবেন না।

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ভুল-বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই বলেও সুষমা অন্য এক প্রশ্নের জবাবে জানান। বলেন, এই প্রশ্নে মিয়ানমারের প্রতি ভারত সহানুভূতিশীল—এমন ধরনের কোনো অনুযোগ বাংলাদেশের কেউ করেননি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সমঝোতা হয়েছে। সে কথা জানিয়ে সুষমা বলেন, স্টেট কাউন্সেলর সু চি দুই বছরের মধ্যে সবাইকে ফেরত নেওয়ার কথা বলেছেন। এ বিষয়ে দুই দেশের যুগ্ম ওয়ার্কিং গ্রুপের দুটি বৈঠক হয়েছে। ১ হাজার ২২২ জনকে চিহ্নিত করে সেই তালিকা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে। সুষমা বলেন, দুই দেশ আন্তরিকতার সঙ্গে এগোলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাত্মক দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বহু দিন বন্ধ রয়েছে। সেই বন্ধ আলোচনা ফের শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হলে সুষমা বলেন, ভারতের মনোভাব ও সিদ্ধান্তের কোনো বদল হয়নি। সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।