সাইফুলের সৌরচালিত 'উভচর' সাইকেল

সাইকেলের চাকার দুই পাশে বাতাসভর্তি টিউব থাকায় সহজে ভারসাম্য রক্ষা হয়। গত মঙ্গলবার ফরিদপুর সদর উপজেলার ধলার মোড় এলাকায় পদ্মা নদীতে।  ছবি: প্রথম আলো
সাইকেলের চাকার দুই পাশে বাতাসভর্তি টিউব থাকায় সহজে ভারসাম্য রক্ষা হয়। গত মঙ্গলবার ফরিদপুর সদর উপজেলার ধলার মোড় এলাকায় পদ্মা নদীতে। ছবি: প্রথম আলো

সাইকেলের হ্যান্ডেল ও ক্যারিয়ারে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। দুই চাকার দুই পাশে চারটি গোলাকার টিউব। টিউবের সাহায্যে সাইকেলটি পানিতে ভেসে থাকে। সাইকেল চালাতে প্যাডল ব্যবহার করতে হয় না। কারণ, এটি সৌরবিদ্যুতে চলে। শুধু পানিতে নয়, স্থলপথেও সাইকেলটি চালানো যায়। তখন টিউব চারটি চাকার দুই পাশে আটকে রাখা হয়।

সৌরবিদ্যুচ্চালিত এই ‘উভচর’ সাইকেলটি সাইফুল ইসলামের (৪০)। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে। তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সৌর শক্তি আলো’র সালথা উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক।

সদর উপজেলার ধলা মোড় এলাকায় পদ্মা নদীর একটি ক্যানেলে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সাইফুল ইসলামকে সাইকেলটি চালাতে দেখা যায়। সেখানে ঘণ্টাখানেক তিনি সাইকেল চালান। ২০০ মিটার ক্যানেল অতিক্রম করেন। এ সময় তাঁকে দেখতে নদীর পাড়ে অনেক মানুষ ভিড় করেন। পরে তিনি স্থলপথে সাইকেল চালিয়ে চলে যান।

স্থলপথেও চলে সাইফুলের সাইকেল
স্থলপথেও চলে সাইফুলের সাইকেল

পানিতে সাইকেল চালানোর পর কথা হয় সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ২০১৪ সালে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। পরের বছর ‘শক্তি সৌর আলো’তে যোগ দেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন যন্ত্রের প্রতি তাঁর কৌতূহল ছিল। নিজেই বিভিন্ন খেলনা বানাতেন। তিনি বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় পাটখড়ি, কাচ, কাগজ দিয়ে তিন হাত লম্বা ও এক হাত চওড়া একটি বাস তৈরি করেছিলাম। সেটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসত। কী যে আনন্দ হতো!’

তিনি আরও বলেন, সাইকেলটি তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা, সময় লেগেছে ছয় মাস। সৌরচালিত ধান কাটার যন্ত্র ও রিকশা চালানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন।

তবে তাঁর স্বপ্ন আরও বড়। তিনি বলেন, ‘১৫ জন ধারণক্ষমতার সৌরচালিত স্পিডবোট বানানোর চেষ্টা করছি, যা জলের পাশাপাশি ডাঙায়ও চলবে। এমন একটি সাইকেল বানাতে চাই, যা দিয়ে আকাশে ওড়া যাবে। এ ছাড়া এমন এক জোড়া জুতা তৈরি করতে চাই, যা দিয়ে অনায়াসে পানির ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।’

তবে তাঁর স্বপ্নপূরণের পথে বাধাও অনেক। তিনি বলেন, ‘এই কাজে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার সামর্থ্য কম। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতার বড় প্রয়োজন। স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, জানি না।’