নুরুল ও রাসেল এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি

>
  • দুই বাসের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েন নুরুল।
  • গ্রিনলাইন পরিবহনের বাস রাসেলের পা পিষে দেয়
  • অকূলপাথারে পরিবার।
নুরুল আমিন ও রাসেল সরকার
নুরুল আমিন ও রাসেল সরকার

বাসের চাপায় থেঁতলে যাওয়া পা সংক্রমিত হয়ে এখন জীবনশঙ্কায় রয়েছেন নুরুল আমিন (৫৬)। রাজধানীর মহাখালীতে দুই বাসের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েন তিনি। একটি বাস তাঁর পায়ের ওপর রেখেই পালিয়ে যান চালক। উপস্থিত লোকজন বাস কাত করে তাঁর পা বের করে নিয়ে আসেন। আর দোলাইরপাড়ে বেপরোয়া বাসের চাপায় পা হারানো রাসেল সরকার (২৩) এখন ভবিষ্যতের শঙ্কায় কেবলই কাঁদেন। তাঁদের কেউই এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি।

১৭ মে খিলগাঁওয়ের প্রকাশনা ব্যবসায়ী নুরুল আমিনের ডান পা ছয় নম্বর পথের একটি বাসের চাপায় থেঁতলে হাঁটুর নিচ থেকে মাংসপেশি খসে পড়ে গেছে। ওই দিন তাঁকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়েছিল।

গতকাল সোমবার নুরুল আমিনের জামাতা নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ডান পায়ের সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পায়ে পোকা ধরেছে। তাঁকে পঙ্গু হাসপাতাল থেকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এখন সেখানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন। তাঁর ডান পা কেটে ফেলতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে এখনই সেই অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। সংক্রমণ থেকে তাঁর শরীরে আরও নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।

নুরুলের ওপর নির্ভরশীল তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী। তিনি দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর থেকে অকূলপাথারে পড়েছে পরিবারটি।

বনানী থানার পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে আহত ব্যক্তির পরিবার এ বিষয়ে কোনো মামলা করেনি।

আহত নুরুল আমিনের জামাতা নুরুল ইসলাম বলেন, নুরুল আমিনকে বাঁচাতে হাসপাতাল, চিকিৎসকদের কাছে দৌড়াদৌড়ি করেই তাঁরা কূল পাচ্ছেন না। এ কারণে থানায় যেতে পারেননি। তবে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সেই কর্মকর্তা বাসমালিকের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন।

ভবিষ্যতের শঙ্কায় কেবল কাঁদেন রাসেল
রাসেল ভাড়ার মাইক্রোবাস চালান। গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর দোলাইরপাড়ে গ্রিনলাইন পরিবহনের একটি বাস তাঁর গাড়িতে ধাক্কা দেয়। এ কারণে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর বাসটি আটকে বাসচালকের সঙ্গে তর্ক শুরু করেন রাসেল। একপর্যায়ে বাসচালক তাঁর পা ফ্লাইওভারের রেলিংয়ের সঙ্গে পিষে দিয়ে চলে যান। কাটা পড়ে তাঁর বাম পা।

পিআর এনার্জি নামের যে প্রতিষ্ঠানটি রাসেলের গাড়ি ভাড়া নিয়েছিল, সেই প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসা খরচ চালাচ্ছে। রাসেলের চিকিৎসা চলছে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে।

গতকাল সকালে সেই হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, উদ্বিগ্ন মুখে রাসেলের পাশে বসে আছেন তাঁর স্ত্রী মিম আক্তার। গত রোববারও রাসেলের একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসা করতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিম বলেন, ‘রাসেলের অবস্থা ভালো নয়। সব সময় কান্নাকাটি করে। কিছুদিন থেকে বারবার বলছেন, “আমি বুঝি আর বাঁচব না। আমার ছেলেকে নিয়ে এসো, ওকে দেখব।”’ তিনি বলেন, কীভাবে সংসার চলবে? কীভাবে রাসেল চলবেন? তাঁদের দুই বছরের ছেলের কী হবে, এগুলো ভেবে দিশাহারা রাসেল। রাসেলের কান্না এখন তিনি সহ্য করতে পারছেন না।

রাসেল সরকারের বড় ভাই আরিফ সরকার বলেন, এ পর্যন্ত পাঁচবার অস্ত্রোপচার হয়েছে রাসেলের। প্রায় সাড়ে ছয় ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে তাঁকে। এখন পর্যন্ত গ্রিন লাইন বাসের কর্তৃপক্ষ একবার মাত্র এসে রাসেলের খোঁজ নিয়েছে। তা-ও সেটি আহত হওয়ার ১৫ দিন পর। এরপর আর কোনো খবরই তারা নেয়নি। এমনকি চিকিৎসার জন্য একটি টাকাও দেয়নি। তিনি বলেন, ‘তারা ক্ষতিপূরণ দেবে কি না, এ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। মানুষ মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে-এটা আমি ভাবতেও পারি না। এখন রাসেলের বিচার নিয়েও আমি চিন্তিত। থানায় খোঁজ নিলে তারাও নির্দিষ্ট করে কিছু বলছে না।’