আগামীতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবেন এরশাদ

>
  •  মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন না তিন সাংসদ।
  • তাঁদের মন্ত্রিত্ব নিয়ে ছয়বার প্রশ্ন তোলেন এরশাদ
  • দলের মন্ত্রীদের সরাতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছিলেন রওশন

জাপার উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, জাপার তিন নেতা মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ তো করবেনই না, বরং সরকার বিব্রত হয়, এমন কোনো পদক্ষেপও নেবেন না তাঁরা। এরশাদ ও তাঁর দল সরকারের সঙ্গেই থাকবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাপার চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এ লক্ষ্যে একটি প্রাথমিক কর্মকৌশলও তৈরি করা হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে বোঝাপড়ার পর নির্বাচনী কর্মকৌশল চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসে কি না, সেটা দেখেই কৌশল ঠিক করা হবে। যদিও এরশাদ প্রকাশ্যে বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিক বা না নিক, জাতীয় পার্টি এককভাবেই অংশ নেবে।

দলীয় তিন মন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণার বিষয়ে এরশাদ প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইচ্ছা করলেই কি পদত্যাগ করা যায়? সরকারের সঙ্গে জাতীয় পার্টির যে সম্পৃক্ততা, সেটাও তো চিন্তা করতে হবে।’

মন্ত্রিসভায় থাকা জাপার তিন সাংসদ হলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (পানিসম্পদমন্ত্রী), মসিউর রহমান (পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী) ও মুজিবুল হক (শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী)। আর এরশাদ নিজে মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে আছেন।

গত সাড়ে তিন বছরে দলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এরশাদ অন্তত ছয়বার তাঁর দলের তিন সাংসদের মন্ত্রিসভায় থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর স্ত্রী ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদের গত অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘এভাবে টানাটানি করে বিরোধী দল হওয়া যায় না। আমাদের মন্ত্রীগুলোকে উইথড্র করে নেন।’ এরপর গত ২ মার্চ এরশাদ স্ত্রীর বক্তব্য সমর্থন করে বলেছিলেন, ‘আমরা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করব। বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র।’

অবশ্য দলের নেতা-কর্মীরা এরশাদের এসব বক্তব্যকে ‘কথার কথা’ বলেই মনে করেন। জাপার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, জাপা এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কৌশল নিয়ে ব্যস্ত। এরশাদ গত মাসে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তখন আলোচনার একপর্যায়ে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৭০ আসন এবং পরবর্তী সরকারে ১০ থেকে ১২টি মন্ত্রণালয় চেয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু বলেননি।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার দুই দিন পর রংপুরে গিয়ে এরশাদ নিজেই বিষয়টি সাংবাদিকদের বলেন। দাবি পূরণ না হলে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলেও জানান তিনি।

এরশাদের ঘনিষ্ঠ ও দলের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে আলোচনার বিষয়টি গণমাধ্যমকে বলায় সরকারের বিভিন্ন মহল বিরক্ত হয়। নির্বাচন নিয়ে দলীয় পরিকল্পনা গণমাধ্যমে আসাটা দলের নেতাদের অনেকেরই পছন্দ হয়নি। বিষয়টি কানে গেলে এরশাদ এ বিষয়ে আর কথা বলেননি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আপাতত জাপার কৌশল হচ্ছে সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়ে বিরোধী দলের ভাব দেখানো। এর মাধ্যমে সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠীকে কাছে টানার চেষ্টা করা। ওই কৌশলের অংশ হিসেবেই এরশাদ সরকারের সমালোচনা করে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন।

তবে আজ এক কথা তো কাল তার উল্টো কথার জন্য আলোচিত-সমালোচিত এরশাদ নির্বাচন নিয়ে কী করেন, তা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারছেন না। কারণ, ২০১৩ সালের অক্টোবরে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেন এরশাদ। এক মাস পরই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেয় জাপা। পরের মাসেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন এরশাদ। তবে তাঁর স্ত্রী রওশনের নেতৃত্বে দলের বড় অংশটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে নির্বাচনে অংশ নেয়। জাপা ৩৪ আসন পায়। এরশাদ নিজেও সাংসদ হন।

জাপার কো-চেয়ারম্যান ও এরশাদের অনুজ জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনীতি তার নির্দিষ্ট পথে চলছে না। তাই যখন যেভাবে গেলে বাঁচা যায়, আমরা সেভাবেই চলছি।’

গত বছর অনেকটা ঘটা করে এরশাদ ৫৮টি নামসর্বস্ব দল নিয়ে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ নামে একটি নির্বাচনী মোর্চা গঠন করেন। বছর ঘুরতেই সেটি অনেকটা কাগুজে জোটে পরিণত হয়। এই জোট গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিতে পারেনি। খুলনায় জোটের মেয়র পদপ্রার্থী মুশফিকুর রহমান (লাঙল প্রতীক) জামানত হারান। ক্ষুব্ধ হয়ে এরশাদ প্রথমে খুলনা মহানগর কমিটি বাতিল করেন, পরে মুশফিকুরকে দল থেকেই বাদ দেন।

জানা গেছে, রোজার ঈদের পর জাতীয় পার্টি কয়েকটি বিভাগে জনসভা করবে। এরপর আগামী নির্বাচনের কর্মকৌশল ঠিক করতে ঢাকায় মাঠপর্যায়ের নেতাদের নিয়ে দলের যৌথ সভা হবে।

জাপার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নানা সমীকরণ আছে। সবকিছু চিন্তাভাবনা করেই জাতীয় পার্টিকে এগোতে হচ্ছে।