সরকারের এই মেয়াদেও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে তেমন অগ্রগতি হচ্ছে না

>
  • সারা দেশে মোট আবেদন প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার
  • নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজারের কম
  • সম্পত্তি মূল মালিকের কাছে প্রত্যর্পণের তথ্য কারও কাছে নেই

অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের মামলা নিষ্পত্তির হার নগণ্য। নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর রায় বাস্তবায়নের সংখ্যা আরও কম। ফলে সরকারের বর্তমান মেয়াদে, অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।

আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অর্পিত সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার জন্য সারা দেশে মোট আবেদন পড়েছিল প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১০ হাজারের কম। যেগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে একটি সম্পত্তিও মূল মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ হয়েছে, এমন কোনো তথ্য কারও কাছে নেই।

অথচ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের স্পষ্ট বিধান হচ্ছে, আবেদনের বিষয় নিষ্পত্তি হওয়ার পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক তা মূল মালিকের কাছে হস্তান্তর করবেন। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর কোনো কোনো জেলা প্রশাসক সেই আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে করণীয় সম্পর্কে আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চেয়ে এসেছেন। এর একপর্যায়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা যেতে পারে বলে এক অনুশাসন দেন। ফলে প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে প্রায় সাড়ে তিন বছর।

গত ১ এপ্রিল অর্পিত সম্পত্তির বিষয়ে হাইকোর্টের একটি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এই রায়ে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাতে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে এত দিন আইনগত যেসব জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছিল, তার অবসান ঘটেছে। রায় প্রকাশের পর আইন মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা এক চিঠিতে বলা হয়, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে এখন থেকে আর রিট হবে না। রায় অনুযায়ী জেলা প্রশাসকেরা ব্যবস্থা নেবেন।

এই চিঠি জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে আইন মন্ত্রণালয় পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আইন মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠি সংযুক্ত করে জেলা প্রশাসকদের বরাবর একটি চিঠি ইস্যু করেছে। তাতে লেখা হয়েছে, আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়ে যেন আইনগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এই চিঠি অর্পিত সম্পত্তি হস্তান্তরের প্রক্রিয়াকে আবারও বাধাগ্রস্ত করবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এ রকম কয়েকজন ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনে ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর জেলা প্রশাসকদের করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তাই বিষয়টি সম্পর্কে আলাদাভাবে আইনগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা স্বাভাবিক নয়। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিলেই স্বাভাবিক হতো। এর আগেও এইভাবে কৌশলে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে একের পর এক বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে।

জানতে চাইলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, অতীতে যেসব বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল, হাইকোর্টের রায়ে সেগুলোর সবই দূর হয়েছে। এখন সরকারের তথা ভূমি মন্ত্রণালয়ের উচিত ওই রায়ের আলোকে একটি পরিপত্র জারি করে প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা এবং নিষ্পত্তি হওয়া মামলার ক্ষেত্রে সম্পত্তি প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি মানুষকে জানানোর জন্য সরকারি গণমাধ্যমে রায়ের বিষয়টি প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, ওই রায়ে অর্পিত সম্পত্তির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে কতিপয় স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে আর কোনো দিন কাউকে হয়রানি করা সম্ভব না হয়।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, হাইকোর্টের রায়ের আলোকে প্রশাসনের প্রতি কোনো রূপ নির্দেশনা দেওয়ার প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত সেখানে শুরু হয়নি। তাই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ কবে শুরু হতে পারে, সে সম্পর্কেও কিছু বলা সম্ভব নয়।