মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত ১২ গ্রামের নারী

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ১২টি গ্রামের নারীরা এখন মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত। সম্প্রতি  দক্ষিণ তিমিরকাঠি গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ১২টি গ্রামের নারীরা এখন মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত। সম্প্রতি দক্ষিণ তিমিরকাঠি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

ইফতারির অন্যান্য উপকরণের পাশাপাশি মুড়ির চাহিদা থাকে ব্যাপক। ধনী-গরিব সবার মাঝেই জনপ্রিয় এ খাবার। রমজান মাসে মুড়ির চাহিদা বেড়ে যায়। এ কারণে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মুড়িপল্লির নারীরা বরাবরের মতো এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। রান্নাঘরগুলোয় ভাজা হচ্ছে মুড়ি।

দপদপিয়ার ১২টি গ্রামের হাতে ভাজা মুড়ির কদর রয়েছে সারা দেশেই। রাসায়নিক সার না মিশিয়ে ভাজা এ মুড়ি সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা বেশি। এসব গ্রামে এখন দিনরাত চলছে মোটা মুড়ি ভাজার কাজ।

স্থানীয় লোকজন বলেন, তিমিরকাঠি, জুড়কাঠি, ভরতকাঠি ও দপদপিয়াসহ ১২টি গ্রামে সারা বছর ধরেই চলে মুড়ি ভাজার কাজ। এসব গ্রামের শতাধিক পরিবার যুগ যুগ ধরে মুড়ি ভেজে জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রতিটি পরিবারের নারীরা এ কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। এতে পরিবারের অন্য সদস্যরা সহায়তা করেন। পুরুষেরা ভাজা মুড়ি বাজারজাত করেন। রাসায়নিক ব্যবহার না করায় এখানকার মুড়ির সুনাম বরিশাল, ঢাকা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করায় গ্রামগুলো মুড়িপল্লি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পরিবারের নারীরা উৎসবমুখর পরিবেশে মুড়ি ভাজছেন। মাটির চুলায় তপ্ত বালুর মধ্যে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে চাল। নাড়ানি দিয়ে খচখচ শব্দে নাড়া হচ্ছে তা। একটু পর পটপট শব্দে ফুটছে মুড়ি। এ শব্দে মুখর এখন গ্রামগুলোর রান্নাঘর।

দক্ষিণ তিমিরকাঠি গ্রামে সবচেয়ে বেশি মুড়ি ভাজা হয়। এই গ্রামের গৃহবধূ কাজল রেখা বলেন, ৩০ বছর আগে বিয়ে হওয়ার পরই তিনি শাশুড়ির কাছ থেকে মুড়ি ভাজা রপ্ত করেছেন। এখন তিনি এ কাজে পারদর্শী। মুড়ি ভাজতে হলে হাতের কৌশল জানাটা জরুরি। এ ছাড়া ভাজার উপযোগী মাটির চুলা ও সরঞ্জামের গুরুত্বও অনেক। প্রথমে মোটা চাল লবণপানির সঙ্গে মিশিয়ে মাটির পাত্রে হালকা ভাজতে হয়। এ ক্ষেত্রে ৫০ কেজি বস্তার চালের জন্য এক কেজি লবণের প্রয়োজন হয়। চাল ভাজার পাশাপাশি অন্য মাটির পাত্রে বালুর মিশ্রণ গরম করতে হয়। এরপর মাটির অন্য পাতিলের মধ্যে গরম বালু ঢেলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লবণপানি মেশানো ভাজা চাল ঢেলে দিতে হয়। ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের নাড়াচাড়ায় তৈরি হয় ভালো মানের মুড়ি। তিনি আরও জানান, রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যেই সবাই চেষ্টা করেন ওই দিনের ভাজার কাজ শেষ করতে। এক দিনে কেউ ৫০ কেজি, অনেকে আবার ১০০ কেজি চালের মুড়িও ভাজেন।

ভরতকাঠি গ্রামের আয়েশা বেগম বলেন, এ কাজে চুলার আগুনের প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে হয়। তাই যাঁদের বয়স বেড়েছে, তাঁদের এ কাজে কষ্ট হয়। তবে এটি নারীদের জন্য আলাদা কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা সদরের মুড়ির পাইকারি ব্যবসায়ী মানিক লাল কৌড়া বলেন, এ অঞ্চলের হাতে ভাজা মোটা মুড়ির জনপ্রিয়তা ও কদর অনেক বেশি। কিন্তু মেশিনে ভাজা চিকন মুড়ির কারণে হাতে ভাজা মুড়ির বেচাকেনায় কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মেশিনের মুড়ির কারণে হাতে ভাজা মুড়ি কম দামে বিক্রি করতে হয়। এ কারণে শ্রমিকেরা কম টাকা পাচ্ছেন।