'শামুকখোল' পাখির নিরাপদ বিচরণ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গাছের ডগায় বসে আছে দুটি ‘শামুকখোল’ পাখি। ২৮ মে ২০১৮। ছবি: প্রথম আলো
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গাছের ডগায় বসে আছে দুটি ‘শামুকখোল’ পাখি। ২৮ মে ২০১৮। ছবি: প্রথম আলো

সাদা-কালো রঙের অর্ধশত পাখি ডানা মেলে উড়ছে। এ ডাল থেকে ও ডালে বসছে। কোনোটি আবার সোজা উড়ে গিয়ে কাছের জলাশয়ে নেমে পড়ছে। পাখিগুলো ‘এশিয়ান ওপেনবিল ’ নামে পরিচিত। দেশীয় নাম ‘শামুকখোল’। এশিয়া অঞ্চলের এসব পাখি বর্তমানে খুব একটা দেখা যায় না।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় এরা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত পাখি বলে উল্লেখ করা হয়। প্রকৃতিতে কালেভদ্রে এদের দেখা পাওয়া যায়। তবে এদের সহজে দেখা মেলে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের কোর সাফারির বনবাদাড় ও জলাশয়ে।

গত সোমবার এই সাফারি পার্কে গিয়ে কোর সাফারি অঞ্চলের ঘন শালবনের চূড়ায় পাখির কয়েকটি ঝাঁক ওড়াউড়ি করতে দেখা যায়। পার্কের বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ ধরে পাখিগুলো আবার উড়ে গিয়ে গাছের ডগায় বসছে। আধা ঘণ্টা অবস্থান করে পাখির অন্তত তিনটি ঝাঁক উড়ে যেতে দেখা গেল। এগুলোর পাখা সাদা ও কালো রঙের। পিঠের উপরিভাগে ও লেজের অংশে ধূসর কালো রঙের ছোঁয়া আছে। এদের ঠোঁট অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির। পাখিগুলোর গড় দৈর্ঘ্য ৮১ সেন্টিমিটারের মতো।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সপেক্টর সরোয়ার হোসেন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেটের হাওর অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে একসময় প্রচুর এসব পাখি দেখা যেত। এই পাখিগুলো আশপাশের দেশ থেকে অনেক সময় আমাদের দেশে আসে। দেশের কিছু কিছু জায়গায় এখনো অল্পসংখ্যক এই পাখির সন্ধান মেলে। পার্কের কোর সাফারির ঘন জঙ্গলে গাছের ডালে এরা দল বেঁধে বসে থাকে। প্রায়ই দলবদ্ধ হয়ে জলাশয়ে মাছ ধরতে যায়।’ তিনি বলেন, ‘এই পাখিগুলো প্রকৃতি থেকে যদিও হারিয়ে যাচ্ছে, তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই এদের বিপন্ন বা মহাবিপন্ন তালিকায় স্থান দেয়নি। জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এরা দুই থেকে পাঁচটি পর্যন্ত ডিম দেয়। প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম সাফারি পার্কে মুক্ত জলাশয়ে পাখিগুলোর দেখা মিলছে।’

সরোয়ার হোসেন খান বলেন, যেসব ক্ষুদ্র জলজ প্রাণীর খোলস থাকে, সেগুলোই এই পাখির প্রধান খাবার। তাই এই পাখিকে শামুকখোল বলা হয়। এ ছাড়া এই পাখিগুলো ব্যাঙ, ছোট মাছ ও জলজ কীটপতঙ্গও খায়। পার্কের কোর সাফারিতে জল ও সবুজের এক চমৎকার সমন্বয় থাকায় এখানে পাখিগুলোর আনাগোনা ঘটছে। নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতর অবস্থিত বনে আশ্রয় নেওয়ায় শিকারির নাগালের বাইরে নিশ্চিন্তে বসবাস করছে এরা।

বন বিভাগের ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টারের পাখিবিদ শিবলী সাদিক বলেন, এই পাখিগুলো একসময় একদম কমে গিয়েছিল। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাওর অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। তবে এখন দেশে এই পাখির সংখ্যা কত তা জানা নেই।

সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক মোতালেব হোসেন বলেন, শিল্প এলাকা হলেও গাজীপুরের সাফারি পার্কের কোর সাফারির পরিবেশটা শামুকখোল পাখির জন্য উপযোগী। এ জন্য এরা এখানে এসে আশ্রয় নেয়। পাখিগুলো পার্কের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।