ছোট বোনকে উদ্ধার করতে নেমে ভেসে গেল বড় বোনও

মরা তিস্তা নদীতে গোসল করতে নামে ছোট বোন। তাকে উদ্ধার করতে নদীতে নামে বড় বোন। কিন্তু উদ্ধার করতে পারল না। উল্টো মরা তিস্তা তার পানির প্রবল তোড়ে দুবোনকেই ভাসিয়ে নিয়ে গেল। পরিণতিতে ঘটল দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু। আজ বুধবার দুপুরে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

একই পরিবারের দুই বোনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহত দুই বোন হলো হারাগাছ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ধুমগারা এলাকার শ্রমিক ইদ্রিস আলীর দুই মেয়ে জেসমিন (১০) ও সুমাইয়া (৭)। এদের মধ্যে জেসমিন শেখপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আর সুমাইয়া (৭) স্থানীয় একটি মসজিদভিত্তিক মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল। পরিবারে ইদ্রিস আলীর আর কোনো সন্তান নেই।

এলাকাবাসী জানায়, বেলা দেড়টার দিকে জেসমিন ও সুমাইয়া বাড়ি থেকে বের হয়। নদীর ধারে খেলা করতে করতে একসময় ছোট বোন সুমাইয়া নদীতে গোসল করতে নামে। কিন্তু নদীতে নামার পর পানির প্রবল স্রোতের কারণে সে ওপরে উঠতে পারছিল না। ভয় পেয়ে সে চিৎকার ও কান্নাকাটি করছিল। ছোট বোনের এমন অবস্থা দেখে বড় বোন আর ঠিক থাকতে পারেনি। তাকে উদ্ধারে জেসমিনও নদীতে নামে। একপর্যায়ে দুই বোনই নদীর পানিতে ডুবে যায়। এলাকাবাসী নদীতে নেমে দেড় ঘণ্টা পর দুই বোনের লাশ উদ্ধার করে।

ইদ্রিস তাঁর দুই মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বিলাপ করে বলছিলেন, ‘ছাওয়া দুইটা মোর চলি গেল। এলা কায় মোক বাপ কয়া ডাকপে।’ বাবা-মার কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

হারাগাছ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মামুনুর রশিদ শিশু দুটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক। কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন আর রশিদ বলেন, নিহত দুই শিশুর পরিবার ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই শিশু দুটিকে দাফন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।