মাকে খুঁজে চলেছেন রাজু

মায়ের খোঁজে ছেলে রাজু হোসেনের সাঁটানো পোস্টার
মায়ের খোঁজে ছেলে রাজু হোসেনের সাঁটানো পোস্টার

হরিণবেড়ের বাঁকে তিতাস নদীর কাছে কবি আল মাহমুদ তাঁর মায়ের সোনার নোলকের সন্ধান করেছিলেন। সেখান থেকে সবুজবন, পাখপাখালি আর পাহাড় ঘুরে একসময় খোঁপা এলিয়ে রাত্রি নেমেছিল পৃথিবীতে। তবু হাল ছাড়েননি তিনি। বলেছিলেন, সোনার নোলক না নিয়ে ‘ঘরকে’ ফিরবেন না।

নওগাঁর রাজু হোসেনের আর ঘরে ফিরতে মন চায় না। তাঁর মা-ই যে হারিয়ে গেছেন।

মো. রাজু হোসেন রিকশাচালক। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন, বেরোয় তাঁর একমাত্র ভাইটিও। মা মোসাম্মত রঞ্জু ফাতেমা ঘর আগলে থাকেন ছেলে দুটির জন্য। সেই কবে কোনো ছোট্টবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন রাজু, সেই স্মৃতিই এখন অস্পষ্ট। মা-ই সব। বাবার চিকিৎসায় সব জমিজমা বিক্রি করে দিতে হয়েছিল মাকে। তারপর চলে এসেছেন নওগাঁ শহরে। খালার বাসার এক চিলতে জায়গায় মা তার দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। চেয়েচিন্তে ছেলেদের মুখে খাবার জুগিয়েছেন। বছর খানেক ধরে মায়ের কিছু মানসিক সমস্যা ধরা পড়ে। রঞ্জু ফাতেমা একাই মেয়ের কাছে চলে যেতেন। সাত-আট মাস আগে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে রাজু দেখেন মা নেই। এক দিন এক দিন করে এত্তগুলো দিন পেরিয়ে গেছে, তবু মায়ের খোঁজ মেলেনি।

দিন এনে দিন খাওয়া রাজু প্রথম দিন থেকে মা কে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। হাসপাতালে ঘুরেছেন, থানায় গেছেন। সারা শহরে পোস্টার সেঁটেছেন। স্থানীয় কেবল টিভি নেটওয়ার্ক যারা চালান তাঁদের হাতে-পায়ে ধরে মায়ের ছবি দিয়ে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছেন। নওগাঁর বাণিজ্য মেলার র‍্যাফল ড্র উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় কেবল টিভি নেটওয়ার্ক সরাসরি প্রচার করেছিল। সেখানেও তিনি প্রচারের ব্যবস্থা করেছেন। সবশেষ আজ সকালে তিনি ফোন করেছেন প্রথম আলোর কাছে।

মো. রাজু হোসেন প্রথম আলো কে বলেছেন, ‘কাজ থেকে প্রতিদিন বাসায় গিয়ে দেখি আমার মা নেই কো। দেশবাসীক একটু খবরটা পৌঁছে দিতে পারেন? একটাই আমার অনুরোধ। অন্তত লাশটাও যদি পাতাম, মাটি দিতাম। মনকে বুঝ দিতাম, কষ্ট করে মানুষ করিছে, অন্তত মাটি দিতে পারিছি।’