মাদারীপুরে কবিগানে মাতলেন শ্রোতারা

মাদারীপুরে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের কবিগানের আসর। ছবি: প্রথম আলো
মাদারীপুরে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের কবিগানের আসর। ছবি: প্রথম আলো

দুই বাংলার প্রখ্যাত কবিয়াল অসীম সরকার ও অমল সরকারের সুরে ও তালে মাতোয়ারা মাদারীপুরের কবিগানপ্রেমীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টি উপেক্ষা করেই তাঁরা এলেন সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের বাহাদুরপুর স্কুলমাঠের মঞ্চের সামনে। মাঠের মাঝখানে বানানো মঞ্চে দুই কবিয়ালের বাগযুদ্ধে মুগ্ধ হলেন দর্শক।

বাঙালি লোকসংস্কৃতির একটি অন্যতম ধারা হচ্ছে কবিগান। হারিয়ে যাওয়া কবিগানের আয়োজন করেছেন বাহাদুরপুর, চৌহদ্দি, উত্তর কলাগাছিয়া, আড়ুয়াকান্দি ও কমলাপুর গ্রামের তরুণেরা। গতকাল থেকে তিন দিনব্যাপী এই আসর শুরু হয়েছে। এর প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন ব্যবসায়ী কমলেশ-ভক্ত। মনোমুগ্ধকর এই আয়োজন কেউ দাঁড়িয়ে আবার কেউবা মাটিতে চট বিছিয়ে বসে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করলেন। কবিগানের উৎসবকে দর্শকদের কাছে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলতে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। কবিগান উপলক্ষে স্কুলমাঠের চারপাশে বসেছে বিভিন্ন পণ্যের দোকান।

গতকাল রাতে দেখা যায়, শুধু মাদারীপুর জেলার দর্শকেরাই নন, আশপাশের উপজেলা থেকে এমনকি পাশের জেলা গোপালগঞ্জ থেকে দর্শকেরা এসেছেন এ কবিগান উপভোগ করতে। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী কবিগান শুনে অনেকেই খুশি। আবার অনেকেই হারিয়ে গেছেন সেই পুরোনো দিনে।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে আসা দর্শক কলেজছাত্র সুজিৎ কুমার বলেন, ‘বাংলা লোকসংগীতের মধ্যে লালন, বাউল, ভান্ডারি, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, কীর্তন, কবিগান, যাত্রাপালা, শ্যামাসংগীত আমার খুবই প্রিয়। এসব গানের আসর বসলেই আমি বন্ধুদের নিয়ে সেখানে যাই। এখানে এসে ভারতীয় শিল্পীদের সুরে কবিগানের তর্ক-বিতর্কের যুদ্ধ আর কবিতার ছলে গান শুনে অনেক ভালো লেগেছে।’

কবিগানের এই উৎসব দেখতে আসা জেলা পরিষদের সদস্য যতীন সরকার বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কবিগান আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এখানে এসে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও খুঁজে পেয়েছি সেই পুরোনো আনন্দ।’

কবিগানের পৃষ্ঠপোষক কমলেশ ভক্ত বলেন, ‘আমার পরিবারের সবাই কবিগান শুনতে পছন্দ করেন। আমি পাঁচ গ্রামের তরুণদের নিয়ে সবার সহযোগিতায় এ কবিগানের আয়োজন করেছি। এর আগে এখানে এমন উৎসব হয়নি। এর মাধ্যমে শ্রোতারা বাঙালির ঐতিহ্যকে জানতে পেরেছেন। ভারত থেকে প্রখ্যাত কবিয়াল অসীম সরকার, অমল সরকারসহ ১৩ জনের একটি দল আমাদের এখানে তিন দিনব্যাপী কবিগান পরিবেশন করবেন।’

ভারতের কবিয়াল অসীম সরকার বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে এর আগেও বহু অঞ্চলে এই কবিগানের উৎসব করতে গিয়েছি। কবিগান আমার প্রাণ। দর্শকদের আগমনই প্রমাণ করে দেয় যে তাঁরা কবিগানকে কতটা ভালোবাসেন।’