রাজউকে ঘুষ না দিয়ে প্ল্যান পাসে ১০ বছর লাগবে

কাজী ফিরোজ রশীদ
কাজী ফিরোজ রশীদ

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে ঘুষ না দিয়ে ভবনের নকশা পাস করা যায় না বলে অভিযোগ করেছেন সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, রাজউকের অপর নাম দুর্ভোগের জায়গা। সেখানে ঘুষ না দিয়ে একটি ভবনের প্ল্যান পাস করাতে ১০ বছর লাগবে। সংস্থাটির কোন ফ্লোরে কত ঘুষ দিতে হয়, সেটি নির্দিষ্ট করা আছে। রাজউক হচ্ছে লুটপাটের খনি।
রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সেন্টারে আজ শনিবার রিহ্যাব ও সেন্টার ফর কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের (সিসিএন) যৌথ আয়োজনে জাতীয় অর্থনীতিতে আবাসন খাত শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
সরকারি দপ্তরে জমি রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় বলে মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জমি রেজিস্ট্রেশনের মতো বিড়ম্বনা আর নেই। রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে আপনি যদি মিনিমাম আধা কেজি ঘাম না ঝরাইতে পারেন, তাহলে আপনার রেজিস্ট্রেশন হবে না। রেজিস্ট্রার স্যার একবার রুমে যাবেন, চা খাবেন, কখন আসবেন, কখন যাবেন—ওনার প্রতীক্ষায় বসে থাকতে হবে। আর না হলে আপনি যদি খুব পয়সাটয়সা খরচ করেন, মানে কমিশন দেন, তাহলেও তারিখের জন্য বসে থাকতে হবে।’
দীর্ঘদিন ধরেই আবাসন খাতে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দাবি করে আসছে রিহ্যাব। সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ধারা ফিরিয়ে আনা উচিত। না হলে টাকা কোনো দিন ধরে রাখতে পারবেন না। পানির স্রোতের মতো টাকা চলে যাবে যেখানে সুযোগ আছে। সেই টাকা আটকে রাখার ক্ষমতা কোনো আইনের নেই। তাই বারবার বলছি, সেই টাকা শিল্পে বিনিয়োগ হোক। আবাসন খাতে বিনিয়োগ হোক।’
গোলটেবিল আলোচনায় রিহ্যাবের নেতাসহ অন্য বক্তারা ফ্ল্যাট নিবন্ধন ব্যয় ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা, নিম্নমধ্য আয়ের মানুষকে স্বল্প সুদে আবাসন ঋণ দিতে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন, ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনা, রাজউকের হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানান।
রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাজেটে গৃহায়ণ খাতে ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ টাকাই সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য। একটা টাকাও সাধারণ মানুষের জন্য ছিল না। অতীতেও সাধারণ মানুষের আবাসন মানুষের জন্য বাজেটে কোনো বরাদ্দ ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, আবাসন প্রতিষ্ঠান ব্যাংক খাত থেকে কোনো সহযোগিতা পায় না। ঋণ পায় না। ক্রেতারা পান। কিন্তু পাঁচ বছরের গৃহায়ণ ঋণ হতে পারে না। ২০ থেকে ২৫ বছরের গৃহায়ণ ঋণ হতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ রিহ্যাবের বিভিন্ন দাবিদাওয়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে ব্যবসায়ীদের দাবির সঙ্গেও একমত পোষণ করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক খাত নিয়ে আমাদের আরও সতর্ক ও যত্নবান হতে হবে। ব্যাংকে টাকা জমা রেখে চেক দিয়ে যদি টাকা তুলতে সমস্যায় পড়তে হয়, তাহলে হবে না। ইসলামী ব্যাংক নামকরা ব্যাংক ছিল। কিন্তু অল্প টাকা আনতে গেলেও কষ্ট হয়। সব ব্যাংক নয়, অল্প কিছু ব্যাংকে সমস্যা।
গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আইনজীবী তাসমিয়াহ নুহিয়া আহমেদ। সঞ্চালনা করেন জিল্লুর রহমান। আরও বক্তব্য দেন সাংসদ ও রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নূরুন্নবী চৌধুরী, সাংসদ নূরজাহান বেগম, রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, বারভিডার সভাপতি হাবিব উল্লাহ, বিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ, আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান প্রমুখ।