ঈদযাত্রায় চার জেলায় অপেক্ষা করছে দুর্ভোগ

কার্পেটিং তো নেইই, নিচের মাটি পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে। ২৭ মে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর এলাকায়।  ছবি: সাইয়ান
কার্পেটিং তো নেইই, নিচের মাটি পর্যন্ত বেরিয়ে এসেছে। ২৭ মে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর এলাকায়। ছবি: সাইয়ান

ঈদে সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশালে যাবেন? রাজধানীর গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত কমবেশি নির্বিঘ্নে যেতে পারবেন। ঘাট পার হওয়ার পর আসল দুর্ভোগ। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, ফরিদপুরের নগরকান্দা ও ভাঙা, মাদারীপুর সদর এবং বরিশালের গৌরনদী ও উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কগুলো দুর্ভোগ নিয়ে আপনার অপেক্ষায় আছে।

গাবতলী-পাটুরিয়া
গাবতলী থেকে সাভার হয়ে মানিকগঞ্জ শহর পর্যন্ত মহাসড়কের কোথাও এখন খানাখন্দ নেই। একই অবস্থা মানিকগঞ্জ শহর থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত সড়কের। গতবারের বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে সড়কের মানিকগঞ্জ সদরের মুলজান ও লওখণ্ড এলাকায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে তা মেরামতের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।

মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথের (সওজ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সড়ক বিভাগ) আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে মহাসড়কের অবস্থা বেশ সন্তোষজনক। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কের বর্ধিত অংশের আট ফুটের মেরামত করা হচ্ছে।

তবে এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বাজার। এসব এলাকায় ঈদের সময় তীব্র যানজট নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়ায়। সড়কের সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, বানিয়াজুরী, মহাদেবপুর, বরঙ্গাইল, টেপড়া এবং উথলী এলাকায় বাজার রয়েছে। এসব স্থানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়। ফলে স্বাভাবিক সময়েও যানজট হয়।

রাজবাড়ী
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ফরিদপুরের দিকে বসন্তপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার সড়ক। পুরোটাতেই এখন ছোটবড় খানাখন্দ রয়েছে। এর মধ্যে দৌলতদিয়ার বাংলাদেশ হ্যাচারিজ থেকে চার লেন সড়কের আড়াই কিলোমিটারের অবস্থা জরাজীর্ণ। সড়কজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ। এসব গর্তের কোনোটার আকৃতির প্রায় পাঁচ-ছয় ফুট। কোনো কোনো গর্তে দীর্ঘ সময় ধরে পানি জমে থাকছে।

বাংলাদেশ হ্যাচারিজ থেকে গোয়ালন্দের জমিদার সেতু পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। কেবল গোয়ালন্দ ফিড মিলের কাছে এখনো সংস্কারকাজ চলছে। জমিদার সেতু থেকে গোয়ালন্দ মোড়ের আগেখানখানাপুর আরঅ্যান্ডবি ব্রিকস ইটভাটা পর্যন্ত সড়কের কার্পেটিং ফেটে চৌচির হয়ে আছে।

রাজবাড়ী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, সড়কের রাজবাড়ী অংশের ১৭ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে এক কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে মেরামতকাজ চলছে।

ফরিদপুর
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ৩২ কিলোমিটার পড়েছে ফরিদপুরে। বসন্তপুর থেকে রাজবাড়ী মোড় পর্যন্ত সমস্যা নেই। তবে এখান থেকে ভাঙ্গা উপজেলারপুখরিয়া এলাকাপর্যন্ত জায়গায় জায়গায় খানাখন্দ আছে।

ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা রেলগেট থেকে নগরকান্দার মহিলা রোডের ডাবল সেতু পর্যন্ত তিন কিলোমিটার, নগরকান্দার ডাঙ্গি ইউনিয়নের বাঁশাগাড়ি এলাকার দেড় কিলোমিটার, ভাবুকদিয়া থেকে পুখুরিয়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং পুখরিয়ার পর থেকে ভাঙ্গার দিকে যেতে আড়াই কিলোমিটার রাস্তা এবড়োখেবড়ো।

মহাসড়কের ওপর গর্তে জমে গেছে পানি। ২৭ মে গোয়ালন্দ ইউপি কার্যালয়ের সামনে।
মহাসড়কের ওপর গর্তে জমে গেছে পানি। ২৭ মে গোয়ালন্দ ইউপি কার্যালয়ের সামনে।

ফরিদপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এই সড়ক ঠিক রাখতে তাঁরা চলতি অর্থবছরে দেড় কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। ভবিষ্যতে বড় প্রকল্প নিয়ে সড়কের ওই ৯ কিলোমিটার অংশে কার্পেটিং করা হবে।

মাদারীপুর
ভাঙ্গার পর থেকে কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার সড়ক মাদারীপুরে পড়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুরে সদরের সোমাদ্দার পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের অবস্থা ভালো নয়। এই অংশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক খানাখন্দ ও গর্তে ভরা। অনেক স্থানে রাস্তা দেবে গেছে।

ভাঙ্গা থেকে বড়ইতলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তাই বেহাল ছিল। এর মধ্যে পাঁচ কিলোমিটারে সিলকোট করে দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা এখনো খারাপ। এই অংশে পিচ উঠে ছোট-বড় গর্ত ও বিভিন্ন অংশে দেবে গেছে। টেকেরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজৈর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা। আবার এ অংশের বেশির ভাগ সেতুর সংযোগ (অ্যাপ্রোচ) সড়কে পিচ উঠে গর্ত হয়ে আছে।

মাদারীপুর সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঈদের আগে এই সড়কের কাজ প্রায়ই শেষ করে ফেলব। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। সড়কের কোথাও এখন গর্ত নেই। ইটের খোয়া আর পাথর দিয়ে গর্ত ভরাট করা হয়েছে।’

বরিশাল
ভুরঘাটা থেকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থল থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত সড়কে কোথাও পিচ নেই। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাথর-ইটের খোয়া, বড় বড় গর্ত। ভুরঘাটা-বরিশাল ৪৬ কিলোমিটার সড়ক সওজের অধীনে। এর মধ্যে গৌরনদীর কটকস্থল বাসস্ট্যান্ড থেকে ভুরঘাটা পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার খুবই বেহাল। খাঞ্জাপুর-ভুরঘাটা এক কিলোমিটারের বেশি সড়কে পাথর-খোয়া উঠে গেছে। উজিরপুরের জয়শ্রী থেকে গৌরনদীর আনোয়ারা হাসপাতাল পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাথর উঠে গেছে। অথচ এই অংশের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। 

বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মূলত মহাসড়কের নকশা অনুযায়ী এই সড়ক করা হয়নি। আগে এখানে হেরিংবোন সড়ক ছিল। তার ওপরে ধীরে ধীরে এই সড়ক হয়েছে। তাই সড়কের ভিতে সমস্যা আছে। যেহেতু এটা চার লেন অনুমোদন হয়ে গেছে, তাই আমরা বড় প্রকল্প নিইনি। দুই পাশ বর্ধিত ও মসৃণ করে চলাচলের উপযোগী করতে প্রকল্প হাতে নিয়েছি।’

(তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশালসাভার; প্রতিনিধি, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুরগোয়ালন্দ)