রাজীব মীরের সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে

স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে রাজীব মীর। ছবিটি মেয়ের এক বছরের জন্মদিনে দিন তোলা। ছবি রাজীব মীরের ফেসবুক থেকে নেওয়া
স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে রাজীব মীর। ছবিটি মেয়ের এক বছরের জন্মদিনে দিন তোলা। ছবি রাজীব মীরের ফেসবুক থেকে নেওয়া

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কাভারে মেয়ে বিভোরের ছবি। আর প্রোফাইল ছবিতেও বাবা ও মেয়ের হাস্যোজ্জ্বল ছবি। এই বাবা হলেন চট্টগ্রাম ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, লেখক, গবেষক, বিভিন্ন মানবাধিকারের বিষয় নিয়ে আন্দোলনকারী রাজীব মীর।

লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রাজীব ভারতের চেন্নাইয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। ১৪ মাস বয়সী মেয়ে বিভোরের দিন কাটছে বাংলাদেশে মা সুমনা খানের সঙ্গে। মেয়ে প্রায় দুই মাস ধরে সরাসরি বাবাকে দেখতে পাচ্ছে না। বাবা-মেয়ের দেখা হয় ভিডিও কলে বা ছবিতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাজীব মীর আহমদ ছফার লেখা থেকে তুলে ধরেছেন, ‘পিতামহ বনস্পতি: বিনীত সন্তানে তুমি দাও এই বর, সূক্ষ্ম শরীর ধরে এই মাঠে যেন আমি বেঁচে থাকি অনেক বছর।’

কিন্তু এই অনেক বছর বেঁচে থাকার বিষয়টি চিকিৎসকদের ভাষায় গিয়ে পৌঁছেছে মাত্র দুই মাসের হিসাবের মধ্যে। এই দুই মাসের হিসাব থেকেও প্রতিদিন একটু একটু সময় কমছে, আর রাজীব মীর এগিয়ে যাচ্ছেন মৃত্যুর দিকে। এই সময়ের মধ্যে অস্ত্রোপচার করে লিভার প্রতিস্থাপন করা না গেলে হয়তো সবার সব চেষ্টা ব্যর্থ হবে।

সোমবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে কথা হলো রাজীব মীরের সঙ্গে। শারীরিক দুর্বলতার পরেও মনের জোরে বললেন, ‘আমি খবর পেয়েছি, আমার চিকিৎসার সহায়তায় আমার পরিবার, বন্ধু, স্বজন, এমনকি অপরিচিত মানুষজনও এগিয়ে এসেছেন। আমি আমার মেয়ের কাছে ফিরতে চাই। সবার দোয়া ও সহযোগিতা থাকলে ভালো হয়ে দেশে ফিরতে চাই।’

রাজীব মীরের এ ইচ্ছা পূরণের জন্য আপাতত প্রয়োজন মাত্র ৯০ লাখ টাকা। পরিবার, বন্ধু, স্বজনদের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৪০ লাখ টাকা হাতে পাওয়া গেছে। রাজীব মীরের সঙ্গে আছেন বোন সৈয়দা ফারজানা ইয়াসমীন। তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন, কিন্তু তারপরেই থেমে গেলেন। কেননা পথের শেষ পর্যন্ত যেতে তো এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দা ফারজানা ইয়াসমীন ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজীব মীরের লিভার প্রতিস্থাপনে তিনি একজন ডোনার। ডিএনএ টেস্টসহ বেশির ভাগ টেস্টই সম্পন্ন হয়েছে এবং তা ইতিবাচক এসেছে বলে জানালেন তিনি। এখন অপেক্ষা অস্ত্রোপচার টেবিলে যাওয়ার। কিন্তু ওই টেবিলে যেতেই লাগবে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা।

রাজীব মীর বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে এবং বড় সন্তান। রাজীব মীর বাবা, মা ও এক বোন বর্তমানে চেন্নাই আছেন হাসপাতালের কাছেই একটি বাসা ভাড়া করে।

রাজীব মীরের স্ত্রী সুমনা খান মেয়েকে নিয়ে দেশেই আছেন। সম্প্রতি সুমনা খানের জলবসন্ত হয়েছিল। বাচ্চা নিয়ে শিগগিরই তিনি চেন্নাই যাবেন বলে জানালেন।
সুমনা খান জানালেন, বিভিন্নভাবে বিভিন্নজন পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বলে রাজীব মীর এখনো মনোবল হারাননি। স্বামীর বিশ্বাস, তিনি ভালো হয়ে দেশে ফিরবেন। স্বামীকে প্রায় প্রতিদিনই একটু পরপর ভিডিও কলে মেয়েকে দেখানো হচ্ছে। ছবি পাঠানো হচ্ছে। মেয়ে এত ছোট যে সে সেভাবে কিছু বুঝতে পারছে না বলে উল্লেখ করলেন।

রাজীব মীর গত ৯ এপ্রিল সর্বশেষ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। চার এপ্রিল মেয়ের জন্মদিনে স্বজনদের সঙ্গে তোলা বেশ কিছু ছবি আপলোড করেছেন। ২৮ মার্চ ছিল মেয়ে বিভোরের প্রথম জন্মদিন। মেয়ের জন্মদিনে মেয়েকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘...গাছ, পাখি, ফুল, নদী, আকাশ, বাতাস আর মানুষের ভালোবাসা পেয়ে সে বড় হোক।’ ৩০ মার্চ লিখেছেন, ‘ঝড়ে পড়েছি, ঝরে পড়িনি।’

সুমনা খান জানালেন, রাজীব মীরের জন্ডিস ছিল এক থেকে দেড় মাসের মতো। ই-ভাইরাস ধরা পড়লে অনেকেই বলে এটা তেমন ক্ষতিকর কিছু না। বাসায় বিশ্রামে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ভালো না হওয়ায় চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। পেট ফুলে যায়। বমির সঙ্গে রক্ত যায়। তারপর দ্রুত চেন্নাই নেওয়া হয়। এরপর থেকেই বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন রাজীব মীর ও তাঁর পরিবার।

সুমনা খান মেয়ের জন্য হলেও রাজীব মীরকে বাঁচিয়ে রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজীব মীরের পাশে কেউ দাঁড়াতে চাইলে টাকা পাঠানোর ঠিকানা
Sayeda Farjana Yasmin
Dutch Bangla Bank SWIFT Code : DBBLBDDH
A/C # 186-103-00-19648
Dutch Bangla Bank Munshiganj Branch, Munshiganj

A. T. M Akhtar Uddin হিসাব নম্বর: 193.103.46420. Dutch Bangla Bank. Progoti shoroni branch.
A. T. M Akhtar Uddin হিসাব নম্বর: 20501020207966000 ইসলামী ব্যাংক, লোকাল অফিস
জান্নাতুল মাওয়া হিসাব নম্বর: 0752011011239. রূপালী ব্যাংক, লৌহজং শাখা, মুন্সিগঞ্জ
সৈয়দা ফারজানা ইয়াসমিন হিসাব নম্বর: ১৬৭৭৭ ইসলামী ব্যাংক, নিউমার্কেট শাখা, ঢাকা।

বিকাশ নম্বর: 01792 455 828 (জান্নাত), 01748 725 599 (জান্নাত), 01711 278 526 (জান্নাত) , 01818 978 718 (সাইফুল), 01778 795 827 (বিজু), 01969 799 402 (আকিদুল); 01962 646 110 (ভুবন); 01730 995 333 (সুমন) (সব কটি নম্বরই রাজীবের স্বজনদের)

রকেট নম্বর: 01912 678 0457 (সাইফুল), 01788 795 8297 (বিজু), 01676 713 9468 (ভুবন) ; 01969 799 4023 (আকিদুল)