ঘুষ লেনদেন, দালালের দৌরাত্ম্যসহ সাব-রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সেবা নিয়ে ফলোআপ গণশুনানি। কাকরাইল, ঢাকা, ৬ জুন। ছবি: আবদুস সালাম
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সেবা নিয়ে ফলোআপ গণশুনানি। কাকরাইল, ঢাকা, ৬ জুন। ছবি: আবদুস সালাম

ঘুষ লেনদেন, দালালের দৌরাত্ম্য, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের নামে রাজস্ব ফাঁকি। অভিযোগ এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। রেজিস্ট্রেশনের নামে অবৈধভাবে বিভিন্ন ফি আদায়সহ রয়েছে অজস্র অভিযোগ। এসব অভিযোগ সাধারণ মানুষের। যাঁরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার হন, আজ গণশুনানিতে সাব-রেজিস্ট্রারদের পেয়ে তাঁরা তাঁদের ক্ষোভ জানান। তোপের মুখে পড়েন রাজধানীর কয়েকটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তারা।

আজ বুধবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সেবা নিয়ে ফলোআপ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই বিভিন্ন অঞ্চলের সেবাগ্রহীতাদের এসব অভিযোগ উঠে আসে।

ঘুষ গ্রহণসহ অবৈধ সম্পদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা সদরের সাব-রেজিস্ট্রার কুদ্দুস হাওলাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের ঘোষণা দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন। তিনি জমির শ্রেণি পরিবর্তনের নামে সরকারের বিপুল রাজস্ব ফাঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেন।

আজ কোতোয়ালি, গুলশান, তেজগাঁওসহ কয়েকটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বিষয়ে ফলোআপ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

গণশুনানিতে রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা গাজী শহিদুল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ২০১০ সালের একটি দলিলের কপি তুলতে তেজগাঁওয়ের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যাই। দলিলের রশিদের ফটোকপি ও থানার জিডি নিয়ে দলিল উদ্ধারে ঢাকা সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস গেলে সেখান থেকে রাসেল (দালাল) ১৩ হাজার টাকা ঘুষ হিসেবে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার কুদ্দুস হাওলাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। টাকা না দেওয়ায় ওই দলিল তুলতে পারিনি। তা ছাড়া দলিল তুলতে কেন আমি এত টাকা দেব?’

শহিদুল্লাহ বলেন, তেজগাঁও সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দালাল চক্রের আস্তানা। ওই অফিসের রাসেল ছাড়া মামুন নামের আরও একজন রয়েছে, যারা মূলত সাব-রেজিস্ট্রার ঘুষের টাকা সংগ্রহ করে থাকেন।

এ বিষয়ে সঞ্চালক ও দুদক পরিচালক নাসিম আনোয়ার সাব-রেজিস্ট্রার কুদ্দুসের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাসেল তার অফিস স্টাফ নয়। নাসিম আনোয়ার আবার জিজ্ঞেস করেন, রাসেল কেন একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার রুমে বসেন। এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেনি সাব-রেজিস্ট্রার কুদ্দুস।

এ সময় উপস্থিত সবাই সাব-রেজিস্ট্রার কুদ্দুস হাওলাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত দাবি করলে দুদক পরিচালক নাসিম আনোয়ার বলেন, ‘আমরা তথ্য সংগ্রহ করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমি কমিশনার নাসিরউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পরবর্তী সময়ে কমিশনার নাসিরউদ্দিন অনুসন্ধানের ঘোষণা দেন।’

নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলছেন এক ভুক্তভোগী। কাকরাইল, ঢাকা, ৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো
নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলছেন এক ভুক্তভোগী। কাকরাইল, ঢাকা, ৬ জুন। ছবি: প্রথম আলো

সাভারের কামরুজ্জামান অভিযোগ করেন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের স্টাফ নয়, এমন অনেকে থাকেন, তারাই ঘুষের টাকা হ্যান্ডেলিং করে। নিয়ম না থাকলেও সেরেস্তা ফি বাবদ ৭০০ টাকা নেওয়া হয়। বিশেষ কৌশলে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে নাসিম আনোয়ার বলেন, রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে আমরা অনুসন্ধান করব। এ ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে স্টাফ নন, এমন যারা আছেন, সে বিষয়টি ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার দেখবেন। তবে যাঁরা ঘুষের টাকা হ্যান্ডেলিং করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দুদক বিশেষ কৌশলে আইনের আওতায় আনবে বলে তিনি জানান।

ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার দীপক কুমার সরকার বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা বিভাগীয় তদন্ত করব, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শাহজাহানপুর থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী পারভিন রশিদ অভিযোগ করেন, শাহজাহানপুরের শহীদবাগে তার শ্বশুরের মালিকানাধীন একটি জমি বিক্রি না হলেও অন্য একটি জমি তাদের চৌহদ্দি দেখিয়ে বিক্রি হয়েছে। যে কারণে তাঁরা জমিটি হারিয়েছেন। এতে দলিলের সময় সাব-রেজিস্ট্রার এই কাজটি করতে সহায়তা করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এ বিষয়ে গুলশান সাব-রেজিস্ট্রার আসাদুল ইসলাম বলেন, এটা রেজিস্ট্রি-সংক্রান্ত বিষয় নয়। চৌহদ্দির বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের হাত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

পারভিন রশিদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা সাব-রেজিস্ট্রার বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জমিটি দখল হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব। এ ছাড়া উচ্ছেদের জন্য তিনি মামলাও করতে পারেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে দেখার জন্য দুদকের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হবে বলে কমিশনার নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন।

দোহারের আবুল কাসেমের অভিযোগ, দলিল করতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সেরেস্তা ফি নামে টাকা নেওয়া হচ্ছে। দলিল লেখকেরা একটি দলিলের জন্য কত টাকা নিতে পারেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করেন তিনি।

এ বিষয়ে গুলশানের সাব-রেজিস্ট্রার বলেন, সেরেস্তা ফি নামে কোনো ফি নেই।