বায়ুদূষণ রোধ করতে না পারলে ১০ বছর পর অক্সিজেন নিয়ে ঘুরতে হবে

দেশে বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োগযোগ্য কোনো আইন বা বিধি নেই। ফলে বায়ুদূষণ করছে এমন প্রতিষ্ঠানকে কোনো আইন দ্বারা ধরতে পারছে না সরকারি সংস্থাগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সরকার নির্মল বায়ু আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আর বায়ুদূষণ রোধ করতে না পারলে ১০ বছর পরে সঙ্গে অক্সিজেনের বোতল নিয়ে ঘুরতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পের অধীনে নির্মল বায়ু আইনের খসড়া প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহযোগিতায় খসড়া প্রণয়নের কাজ করছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। এর অংশ হিসেবে বুধবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে একটি প্রারম্ভিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার আয়োজন করে পরিবেশ অধিদপ্তর, বুয়েট ও বেলা।

কর্মশালায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। কিন্তু বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োগ করার মতো কোনো আইন বা বিধি না থাকায় যারা বায়ুদূষণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। নির্মল বায়ু আইনে প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনা তিনটি বিষয়ই থাকতে হবে।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, বায়ুদূষণ রোধে আইন এবং ওই আইনের বিধি প্রণয়ন করতে ছয় থেকে সাত বছর লাগবে। বায়ুদূষণ পরিস্থিতি যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা রোধে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে একটি বিধিমালা করা হলে দ্রুত বায়ুদূষণ রোধ করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।

বায়ুদূষণের কারণে ১০ বছর পরে সঙ্গে অক্সিজেনের বোতল নিয়ে ঘুরতে হবে বলে মন্তব্য করেন কেইস প্রকল্পের পরিচালক মনজুরুল হান্নান খান। তিনি বলেন, ‘বায়ুদূষণ রোধে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বায়ুদূষণের যে পরিস্থিতি উদ্যোগ না নিলে ১০ বছর পরে দুটি বোতল সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে হবে। একটি পানির আর একটি অক্সিজেনের।’

নির্মল বায়ু আইনের ক্ষেত্রে এটির বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সেটি নির্ধারণ কঠিন হবে বলে মনে করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘আইন করা হলো কিন্তু সেটি কেউ মানছে না—এমনটি হলে হবে না। জনগণকে বায়ুদূষণ রোধ কার্যক্রমে যুক্ত করতে হবে।’

মুক্ত আলোচনা পর্বে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব বলেন, আইন প্রণয়নের আগে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি, প্রাপ্ত তথ্য ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে হবে। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহির অভাব এবং পারস্পরিক দোষারোপের কারণে অনেক আইন থাকলেও সুফল পাওয়া যায় না। আইন প্রণয়নের আগে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

পরিবেশদূষণের কারণে সরাসরি ভুক্তভোগী সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সাভারে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নেওয়ার সময় সরকারের লোকজন বলছিল, পানিতে কোনো দূষণ হবে না। সিইটিপি (কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার) বসানো হবে। ট্যানারি থেকে বের হওয়া পানি বোতলে ভরে খাওয়া যাবে। ডালিমের রসের মতো পানি হবে। এখন পানি খাচ্ছেন না কেন?’

রফিকুল ইসলাম বলেন, সাভারের বলিয়ারপুরের জমিতে আগে ধান, সবজি হতো। ইটভাটার কারণে এই এলাকায় ধান, সবজি হয় না। এলাকার শিশুদের সারা বছর ঠান্ডা-সর্দি লেগে থাকে।

কেইস প্রকল্পের পরিচালক মনজুরুল হান্নান খানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রি-রোলিং মিল ও ইটভাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মালিক সমিতি, পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।