পেশা তাঁর 'কন্ট্রাক্ট কিলিং'

তিনি চিকিৎসক। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমাও আছে। কিন্তু তিনি নিজের পেশায় না থেকে চুক্তিতে খুন-খারাবি করেন। এমনকি নিজের বাড়িতে অস্ত্রের ভান্ডারও গড়ে তুলেছেন। এই চিকিৎসকের নাম মো. জাহিদুল আলম কাদির।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের একজন সংসদ সদস্যকে হত্যার জন্য লন্ডনপ্রবাসী কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে জাহিদুল চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন।

চিকিৎসক জাহিদুল আলম ও তাঁর স্ত্রী মাসুমা আক্তার দুজনকেই সম্প্রতি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের জিম্মা থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ৬২২টি গুলি। পুলিশ জানায়, ময়মনসিংহের বাঘমারায় আজ ভোররাত চারটার দিকে চিকিৎসকের ফ্ল্যাটে অভিযানে চালিয়ে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের বড় অংশ পাওয়া গেছে। বিশেষভাবে তৈরি স্টিলের একটি ক্যাবিনেটের পেছনে এগুলো লুকানো ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম জানান, জাহিদুল আলম ‘কন্ট্রাক্ট কিলার’ ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তিনি ২০০২ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ও ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবেদনবিদ্যায় ডিপ্লোমা করেন। পাস করার পর কখনোই তিনি সরকারি বা বেসরকারি চাকরির চেষ্টা করেননি। কখনো কখনো অল্প কিছুদিনের জন্য প্রত্যন্ত গ্রামে বসে ডাক্তারি করেন। অস্ত্র সংগ্রহ ছিল তাঁর নেশা। তিনি অস্ত্র চালনাতেও খুব দক্ষ। জিজ্ঞাসাবাদে বেশ গর্বভরে বলেছেন, তাঁর নিশানা কখনো ব্যর্থ হয় না।

এই জাহিদুলকে গত ১৫ মে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে দুটি পিস্তল ও আটটি গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়। রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে গাবতলী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁর স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে। প্রথমে জাহিদুল পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেননি। ফলে ময়মনসিংহের বাঘমারায় তাঁর ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়েও পুলিশ কিছু পায়নি। পরে স্বামী-স্ত্রীকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে উদ্ধার হয় অস্ত্রের বড় জোগানটি। এই অস্ত্রের মধ্যে .২২ বোরের রাইফেল তিনটি, .৩০৩ রাইফেল একটি, .৩২ বোরের রিভলবার চারটি, .২২ রিভলবার একটি, ৭.৬৫ পিস্তল পাঁচটি ও .২৫ পিস্তল একটি। গুলির মধ্যে, .৩০৩ রাইফেলের ১১০টি, .২২ রাইফেলের ১ হাজার ১০০টি, .৩২ রিভলবারের ৩৫৮টি ও .২৫ পিস্তলের ৫৪টি গুলি রয়েছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, রাইফেলগুলো জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। পিস্তলগুলো ব্রাজিল, তুরস্ক ও অস্ট্রিয়ার। সব কটি অস্ত্রই বৈধভাবে যাঁরা অস্ত্র ও গুলি বিক্রি করেন, তাঁদের কাছ থেকে কেনা। তিনি অবৈধভাবে লাইসেন্সবিহীন বিদেশি অস্ত্র সংগ্রহ করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতেন। জাহিদুল আলম তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের বলতেন, পুলিশ কখনো তাঁকে গ্রেপ্তার করতে এলে কমপক্ষে তিন দিন তিনি ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন।

গ্রেপ্তারকৃত জাহিদুল বা মাসুমা কারও পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জাহিদুলের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। পাবনায় বড় হয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর থেকে ময়মনসিংহে থেকে যান। প্রথমে একজন চিকিৎসককে বিয়ে করেছিলেন। শোধরাতে না পেরে ওই চিকিৎসক চলে যান। পরে নিম্নবিত্ত পরিবারের কম শিক্ষিত এক নারীকে বিয়ে করেন জাহিদুল। তারপর তাঁকেও অপরাধে জড়াতে বাধ্য করেন। চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় তিনি কক্সবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনীসহ সীমান্ত এলাকায় গেছেন। এখন পর্যন্ত ঠিক কতগুলো খুনে জাহিদুল অংশ নিয়েছেন, দুদফা রিমান্ডেও পুলিশ জানতে পারেনি বলে দাবি করেছে। তবে তিনি আরও অস্ত্র সংগ্রহ করছিলেন বলে খবর পেয়েছে তারা।