সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন জায়গায় আস্তানা গেড়েছে ভবঘুরেরা। ছবিটি গতকাল বিকেলের।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিভিন্ন জায়গায় আস্তানা গেড়েছে ভবঘুরেরা। ছবিটি গতকাল বিকেলের।

জটলার দিকে এগিয়ে গেলেন একজন সিগারেট বিক্রেতা। কিন্তু সিগারেটের বদলে বাড়িয়ে দিলেন গাঁজা। তা নিয়ে সেবনে মনোযোগ দিলেন জটলার কয়েক ব্যক্তি। উড়ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। উৎকট গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই দৃশ্য রোববারের। ওই সিগারেট বিক্রেতার সঙ্গে কেবল গাঁজা নয়, থাকে
আরও নানা ধরনের মাদক। ফরমাশ অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়।
গত দুই দিনে উদ্যানে ঘুরে দেখা যায়, যত্রতত্র প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি চলে। মাদক কিনে সেখানে বসেই সেবন করে মাদকসেবীরা। পাশাপাশি ভবঘুরেদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে উদ্যানটি। এতে দর্শনার্থীরা উদ্যানটিকে অনিরাপদ মনে করছেন।
মূলত কম বয়সী ছেলেরা মাদক বিক্রি করছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে রিকশাওয়ালাও জড়িয়ে পড়ছে এই কাজে। সেই গাঁজা কিনছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ক্রেতাদের মধ্যে তরুণদের পাশাপাশি বয়স্করাও রয়েছেন।
উদ্যানজুড়ে কিছুদূর পরপরই কয়েকজনকে গোল হয়ে বসে মাদক সেবন করতে দেখা যায়। এ সময় সেখানে উড়তে থাকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর ছড়িয়ে পড়ে বিশ্রী গন্ধ। উদ্যানে ঘুরতে আসা লোকজন বলেন, সন্ধ্যার পরে মাদকের বেচাকেনা আরও জমে ওঠে। তখন গাঁজার থেকে বেশি চলে ইয়াবা। ফেনসিডিলও বিক্রি হয় দেদার।
মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সম্প্রতি সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে ইয়াবা বিক্রি অনেকটা কমে গেছে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তিন মাদক বিক্রেতার কথা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন শুধু মাদকই বিক্রি করেন, অন্য দুজনের একজন রিকশাচালক, একজন সিগারেট বিক্রেতা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় অন্য পেশার লোকজনও মাদক বিক্রেতার খাতায় নাম লেখাচ্ছেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে উদ্যানে চল্লিশোর্ধ্ব এক সিগারেট বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সাত বছর আগে ঢাকায় আসেন। উদ্যানে শুরু করেন চা-সিগারেট বিক্রি। কিছুদিন বাদে দেখতে পান, চা-সিগারেটের তুলনায় গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক চান অনেকে। ধীরে ধীরে শুরু করেন মাদক বিক্রি। এতে কম সময়ে বেশি লাভ।
দিনের বেলা উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পূর্ব অংশে মাদক বিক্রির দৃশ্য বেশি দেখা গেছে। জানা গেছে, মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষ থাকলেও বহিরাগত ছাত্র, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ভবঘুরেদের একটি বিরাট অংশ আছে।
উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম অংশে মাদক সেবন করছে এমন একটি দলের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। নাম না প্রকাশের শর্তে তারা বলে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা পাওয়া যায়, এটা সবাই জানে। ইয়াবাও মেলে। প্রায়ই এখানে মাদক নিতে আসে জানিয়ে তারা বলে, ‘শখে শখে শুরু করছিলাম। এখন তো অভ্যাস হইয়া গেছে, ছাড়তে পারি না।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বেশি দূরে নয় শাহবাগ থানা। দিনের বেলায় উদ্যানে পুলিশি টহল খুব একটা দেখা যায় না। যোগাযোগ করা হলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্যানটি দিনের বেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। তাই সেভাবে তৎপরতা চালানো যায় না। আর এখানে মাদক বিক্রেতারা ভাসমান। তারপরেও এই এলাকা থেকে অনেক মাদক বিক্রেতাকে হাতেনাতে ধরার পরে মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই সংখ্যাও কম নয়। তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

ভবঘুরেদের উৎপাত
মাদকের পাশাপাশি উদ্যানজুড়ে ভবঘুরেদের আড্ডা। দর্শনার্থীদের জন্য বসার পাকা বেঞ্চগুলো ভবঘুরেদের দখলে। গতকাল বন্ধুর সঙ্গে বেড়াতে আসা এক নারী বলেন, উদ্যানের পরিবেশ দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কেবল স্বাধীনতা জাদুঘরের পাশেই একটু বসা যায়। আগে অনেকে পরিবার নিয়ে এলেও সেই সংখ্যা দিন দিন কমছে বলে জানান কয়েক দর্শনার্থী ও হকার।
উদ্যানটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গণপূর্ত অধিদপ্তরের। উদ্যানের এসব সমস্যা নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।