খোঁড়াখুঁড়ি, যানজটে স্থবির ঢাকা

খোঁড়াখুঁড়ির সময় সড়কের অর্ধেকজুড়ে মাটি, বালু, ইট, রড ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে অপ্রশস্ত সড়কে যানজট আরও বাড়ছে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।  ছবি: প্রথম আলো
খোঁড়াখুঁড়ির সময় সড়কের অর্ধেকজুড়ে মাটি, বালু, ইট, রড ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে অপ্রশস্ত সড়কে যানজট আরও বাড়ছে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। ছবি: প্রথম আলো
>
  • টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা
  • প্রায় চার শ সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি
  • বেহাল সড়ক জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ

পঞ্জিকামতে, বর্ষা শুরু হবে আগামী শুক্রবার। অথচ এবারের গ্রীষ্মকাল কেটেছে প্রায় পুরোটাই বর্ষার আমেজে। গতকাল মঙ্গলবারও ব্যতিক্রম ছিল না। চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়। আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, আজ বুধবারও সারা দেশে এমন ধরনের বর্ষণের সম্ভাবনা আছে।
ঢাকায় গতকাল বেলা তিনটার দিকে শুরু হয় বৃষ্টি। কখনো প্রবল, কখনো ছিটেফোঁটা। এভাবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয় ৫৩ মিলিমিটার। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে। নগরীর অনেক সড়কে এখন চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। একে তো ঈদের বাজারে শেষ পর্যায়ের কেনাকাটার ব্যস্ততা, তার ওপর বৃষ্টির পানি, কাদামাটি, অপ্রশস্ত সড়কের কারণে গত কয়েক দিনে দুর্বিষহ রূপ নেওয়া যানজট গতকাল আরও বেড়ে যায়। পুরো শহর প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। ইফতারের আগে ঘরে ফেরা লোকজন, ঈদের কেনাকাটা করতে বের হওয়া মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকেন।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিকেল পৌনে চারটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত সোয়া এক ঘণ্টা সদরঘাট টার্মিনাল থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নৌপথের ঈদযাত্রীরা। বিকেল পাঁচটার পরে আবার টার্মিনালে নৌচলাচল শুরু হয়।
কয়েক দিন ধরে বয়ে যাওয়া দাবদাহ অনেকটাই কেটে যায় গতকালের বৃষ্টিতে। তবে এতে রাজধানীবাসী গরমে স্বস্তির লাভের চেয়ে চলাচলের ভোগান্তিতে পড়েন বেশি। প্রতিবছর বর্ষা আসার আগমুহূর্তে ঢাকায় শুরু হয় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি। এ বছরও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থা রাজধানীজুড়েই চালাচ্ছে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি। এত সড়ক একযোগে খোঁড়ায় নগরবাসীর ভোগান্তি বেড়েছে বহুগুণ।
পল্টন মোড় থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব, শাহবাগ ও বাংলামোটর হয়ে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের নির্মাণকাজের জন্য সড়কের অর্ধেক কেটে রাখা হয়েছে। তিন লেনের সড়কের দুটি লেনই বন্ধ ছিল। বাকি অংশ দিয়ে যানবাহনগুলোকে ধীরগতিতে চলতে হয়েছে। ফলে পুরো সড়কে যানজট লেগেই ছিল।
ব্যবসায়িক কাজে সাভার থেকে গুলিস্তানে যাচ্ছিলেন ইকবাল বাহার। বেলা সাড়ে তিনটায় প্রেসক্লাব এলাকায় তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজান মাসে যানজট বেড়ে গেছে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কের অর্ধেকের বেশি বন্ধ। রমজান মাসে সরকারি সংস্থাগুলোর সড়ক না খুঁড়লে চলে না?’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মতিঝিল এলাকায় সিটি করপোরেশনের কিছু কাজ বাকি ছিল। তিন দিন আগে থেকে সেসব কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রেসক্লাব, শাহবাগের সামনে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও তিন দিন ধরে কাজ বন্ধ রেখেছে।’ তবে দেখা যায়, খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ রাখা হলেও গর্তগুলো ভরাট না করায় দুর্ভোগ মোটেই কমেনি।
আগারগাঁও থেকে শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর হয়ে মিরপুর ১২ নম্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলছে। ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কটি তলিয়ে যাওয়ায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল বিকেলের বৃষ্টিতেও একই পরিস্থিতি হয়। বিকেলে অফিসফেরত যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মোহাম্মদপুরে শারীরিক শিক্ষা কলেজের সামনে থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের আগ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে পানিনিষ্কাশনের নালা নির্মাণের কাজ চলছে।

পাশে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় রাস্তা হয়ে গেছে সরু, দেখা দিচ্ছে যানজট। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে।  প্রথম আলো
পাশে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখায় রাস্তা হয়ে গেছে সরু, দেখা দিচ্ছে যানজট। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। প্রথম আলো

ঢাকার দুই সিটিতে সব মিলিয়ে রাস্তার পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান এবং এলাকার ভেতরের মিলিয়ে দুই শতাধিক সড়কে চলছে বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি। অন্যদিকে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকাতেও দুই শতাধিক সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে।
কিছু শর্ত সাপেক্ষে অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সড়ক খননের অনুমতি দিয়ে থাকে সিটি করপোরেশন। সড়ক অন্য সংস্থা খুঁড়লেও তা সংস্কারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। সড়কের খোঁড়া অংশে বালু ভরাট, স্টিল শিট, নিরাপত্তাবেষ্টনী এবং সাইনবোর্ড ব্যবহার করা সাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, খোঁড়াখুঁড়ির সময়ে সড়কের অর্ধেক অংশজুড়ে মাটি, বালু, ইট ফেলে রাখা হচ্ছে। বৃষ্টির সময় কাদামাটিতে ভরে যাচ্ছে পুরো সড়ক। কোনো ধরনের নিরাপত্তাবেষ্টনীও ব্যবহার করা হচ্ছে না।
ঈদের বাকি মাত্র কয়েক দিন। ইতিমধ্যে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন লোকজন। যানজট, জলাবদ্ধতা, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কপথে রওনা দেওয়া ঈদযাত্রীদের রাজধানী থেকে বের হতেই লাগবে কয়েক ঘণ্টা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলছে, প্রবল মৌসুমি বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এই বৃষ্টির পরিমাণ ৪৪ থেকে ৮৯ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে অধিদপ্তর জানিয়েছে। এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকা এবং চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।