সতর্কবার্তা নিয়ে প্রশাসন ও স্থানীয়দের ভিন্ন কথা

টানা বর্ষণে ভূমিধসের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বসতঘরটি। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের চৌদ্দমাইল এলাকা। গতকাল সকাল ১০টায়।  সুপ্রিয় চাকমা
টানা বর্ষণে ভূমিধসের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বসতঘরটি। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের চৌদ্দমাইল এলাকা। গতকাল সকাল ১০টায়। সুপ্রিয় চাকমা
>
  • সোম-মঙ্গলবার নানিয়ারচরে পাহাড়ধসে ১১ জনের মৃত্যু
  • প্রশাসন বলছে, সতর্ক করার পরও অনেকে বাড়ি ছাড়েনি
  • স্থানীয়রা বলছেন, সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি

ঠিক এক বছর আগে গত বছরের ১৩ জুন রাঙামাটি পৌরসভাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে ১২০ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর ভারী বর্ষণের সময় ঝুঁকিতে বসবাস করা লোকজনকে সতর্ক করা ও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জোর দেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তবে গত মঙ্গলবার জেলার নানিয়ারচর উপজেলার তিন স্থানে পাহাড়ধসের আগে দুর্গত মানুষজন প্রশাসনের কোনো সতর্কবার্তা শোনেননি।
বাসিন্দাদের দাবি, এই উপজেলায় কোনো বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সতর্ক করার পরও তাঁরা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যাননি।
গত সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার ভোরে নানিয়ারচর উপজেলার ধর্মচরণপাড়া, বড়পুলপাড়া ও হাতিমারা এলাকায় পাহাড়ধসে ১১ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে ছয়জন। এ ঘটনায় অন্তত ৮ জন আহত হন। গত শনিবার থেকে টানা ভারী বৃষ্টির মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর ভয়াবহ পাহাড়ধসের পর এ বছর প্রাণহানি ঠেকাতে প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন তালুকদার বলেন, ‘পাহাড়ধসের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি ছিল। আমরা আগাম ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছি। এ ছাড়া দুই মাস আগে জেলাজুড়ে পাহাড়ধস থেকে মানুষকে সচেতন ও রক্ষার জন্য নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির শুরু থেকে বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির ও বিহারে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।’ তবে পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন প্রশাসনের এমন কোনো উদ্যোগের বিষয়ে বলতে পারেননি।
বড়পুলপাড়া শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারটি পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে মাত্র পাঁচ শ গজ দূরে। ওই বিহারের পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল বিকাশ চাকমা বলেন, বিহারে মাইক থাকলেও পাহাড়ধসের বিষয়ে প্রশাসন তাঁদের সতর্ক করার বিষয়ে কিছু বলেনি। এই বিহারকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করারও কোনো নির্দেশনা ছিল না।
ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রতিলাল চাকমা বলেন, ঘিলাছড়ির হাতিমারায় তিনজন পাহাড়ধসে মারা গেছেন। এই এলাকায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র খোলার কথা দুর্ঘটনার আগে প্রশাসন তাঁদের জানায়নি।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, নানিয়ারচর উপজেলা রামহরিপাড়া, ঘিলাছড়ি, বগাছড়ি ও ১৩ মাইল এলাকার অর্ধশতাধিক স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে। ধস হওয়া এলাকায় বেশ কিছু পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব পরিবারকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া না হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
নানিয়ারচর ইউনিয়নের বড় পুলপাড়ায় একই পরিবারের তিনজন মারা গেছেন পাহাড়ধসে। এখানকার কার্বারি (গ্রামপ্রধান) সভাপূর্ণ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যুগ যুগ ধরে এখানে বসবাস করছি। এ পর্যন্ত পাড়ায় কোনো পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেনি। সে কারণে মানুষ কোথাও সরে যায়নি। আগাম বার্তা পেলে হয়তো বিবেচনা করতাম।’
হাতিমারা গ্রামের কার্বারি শান্তিপূর্ণ চাকমা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় প্রশাসন থেকে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি। গ্রামের বাসিন্দাদের কোনো জনপ্রতিনিধিও পাহাড়ধসের বিষয়ে বলেননি। আশ্রয়কেন্দ্রও ব্যবস্থা করা হয়নি।’