পাহাড়ধস রাঙামাটির পর্যটনে আবার ধস নামাল

সুবলং ঝরনা। রাঙামাটি উপজেলার এ ঝরনাটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
সুবলং ঝরনা। রাঙামাটি উপজেলার এ ঝরনাটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

টানা বৃষ্টির কারণে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ কারণে এবারেও রাঙামাটিতে পর্যটন খাতে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটক আগমনে তেমন সম্ভাবনা নেই। এখনো হোটেল-মোটেলগুলোতে বুকিং নেই বললেই চলে। দু-একটি হোটেল-মোটেলে যা বুকিং হয়েছে, তা-ও অনেকে বাতিল করছেন। অথচ অন্যান্য বছর এ সময়ে ৮০ শতাংশ হোটেলে-মোটেলে কক্ষ বুকিং হয়ে যায়। 

গত বছর ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসে ১২০ জন মানুষ মারা যান। এ ছাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্নসহ নানা কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে রাঙামাটি। এতে দৈনিক ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগত লোকসান দিয়ে গেছে। পাহাড়ধসের ঘটনার তিন মাস পর কিছু কিছু পর্যটক আসতে থাকেন। পরবর্তী সময়ে পর্যটন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ায়। আবার বছর ঘুরতেই পর্যটন খাত ক্ষতির অপেক্ষায়।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, দুটি হোটেল-মোটেল ও ছয়টি কটেজে ৮৬টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে সব কক্ষ প্রায় শূন্য রয়েছে। ঈদুল ফিতরের ছুটি উপলক্ষে ২০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়ে যায়। তবে পাহাড়ধসে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এর মধ্যেও বেশ কিছু কক্ষ বাতিল করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার থেকে টানা বৃষ্টির পর ১১ জুন সোমবার রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে অন্তত ১৪টি স্থানে পাহাড়ধস হয়। সড়কের একাংশে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি ধস সৃষ্টি হয়। এ কারণে ওই সড়কে স্বাভাবিক যান ব্যাহত হয়। ১২ জুন চট্টগ্রামের রাউজানে সড়ক তলিয়ে যাওয়ার রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ওই দিনে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধস হয়। এতে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এখনো যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। হালকা যান ও সতর্ক অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে দু-একটি বাস চলাচল করছে। একই সময় রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা তিন স্থানে পাহাড়ধসে ছয় নারী-শিশুসহ ১১ জন মারা যান।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যটন ব্যবসা নেই বললে চলে। ঈদুল ফিতরে কিছু বুকিং হলেও পাহাড়ধসের কারণে তা-ও বাতিল করা হচ্ছে। অথচ ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ৮০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হওয়ার কথা।
রাঙামাটি বেসরকারি হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. মঈন উদ্দিন সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সমিতিভুক্ত ৪৫টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এ ছাড়া আরও ১০ থেকে ১২টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেল-মোটেলে দু-একটি কক্ষ ছাড়া প্রায় সব কক্ষ ভাড়া হয়নি।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১১ ও ১২ জুন তিন সড়কে ৩০ স্থানে পাহাড়ধসে সড়কের ওপর পড়ে যায়। এ ছাড়া ওই তিন সড়কে ৫৮টি স্থানে সড়ক ভেঙে একাংশ পড়ে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়। এর মধ্যে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ২০টি, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে ২০টি ও ঘাগড়া-কাপ্তাই সড়কে ১৮।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিন সড়কে অন্তত ৩০টি স্থানে পাহাড় ধসে সড়কে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ধসে পড়া মাটি সরানো হয়েছে। তবে ওই তিন সড়কে প্রায় ৬০টি স্থানে সড়কের একাংশ ভেঙে গেছে। এতে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল করছে বলে তিনি জানান।