গাজীপুর সিটি নির্বাচন ২৬ জুন, আজ থেকে প্রচার

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা আজ থেকে শুরু হচ্ছে। নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ২৬ জুন। আজ থেকে প্রচার শুরু হলেও রমজান মাস ও ঈদকে কেন্দ্র করে নানা কৌশলে প্রচার চালিয়ে গেছেন প্রার্থীরা। 

নির্বাচন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণের কথা ছিল। হাইকোর্টের আদেশে প্রথমে ভোট আটকে যাওয়া এবং পরে আপিল বিভাগ সেটি প্রত্যাহার করে নেন। নতুন করে ২৬ জুন এ ভোট হওয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে। প্রার্থীরা প্রচারের সুযোগ পাবেন ১৮ জুন থেকে। এর আগে কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭ মেয়র, ২৫৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৮৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী বিএনপিদলীয় মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার, আওয়ামী লীগদলীয় মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমসহ অপর প্রার্থীরা জনসংযোগ শুরু করেছেন।

মেয়র পদে অন্য প্রার্থীরা হলেন ইসলামী ঐক্য জোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি) প্রতীক।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোটগ্রহণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ২১ ও ২২ জুন ওই নির্বাচনের প্রায় নয় হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং ২৪ জুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫০৩ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এসব প্রশিক্ষণ চলবে। জেলা শহরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হাইস্কুল, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট হাইস্কুল, প্রগতি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ব্রি), জয়দেবপুর সরকারি গার্লস হাইস্কুল ও রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামের হলরুমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

৪২৫টি ভোটকেন্দ্রে ৪২৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা (এর ৫ শতাংশ রিজার্ভ), ২ হাজার ৭৬১টি ভোটকক্ষের জন্য ২ হাজার ৭৬১ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা (এর ৫ শতাংশ রিজার্ভ), প্রতিটি ভোটকক্ষে দুজন করে মোট ৫ হাজার ৫২২ জন পোলিং অফিসারসহ (এর ৫ শতাংশ রিজার্ভ) প্রায় নয় হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

৬ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগে যেসব কাজ শেষ হয়েছিল, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর তার অধিকাংশ কার্যক্রম পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে। যেমন ভোটকেন্দ্র ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের পত্র প্রদান, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনায় আচরণবিধি প্রতিপালনের চিঠি প্রদান, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগপত্র পুনরায় তৈরিকরণ ইত্যাদি। এতে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শ্রম ও ব্যয় বেড়ে গেছে।

নির্বাচন কমিশনে ৫৭ জন নিজস্ব পর্যবেক্ষকের জন্য আবেদন
গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনে তাদের ৫৭ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এঁদের প্রতিজন একটি করে ওয়ার্ডের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বেসরকারি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।

৬ কেন্দ্রে ইভিএম ৩ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রস্তাব
গাজীপুর সিটিতে এবার ছয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ভোটার ২৪৮০), চাপুলিয়া মফিজউদ্দিন খান উচ্চবিদ্যালয় (ভোটার ২৫৫২), পশ্চিম জয়দেবপুরের মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (ভোটার ২৫৬২), মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার ২৮২৭), রাণী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (ভোটার-১৯২৭) এবং রাণী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার-২০৭৭)। এ কেন্দ্রগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর ওই এলাকার ভোটারদের নিয়ে ইভিএমে ভোটগ্রহণের মহড়া দেওয়া হবে। এ ছাড়া গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্র, কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং টঙ্গীর আউচপাড়া এলাকার বসির উদ্দিন উদয়ন একাডেমি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন এবং ৫৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন, ১৯টি সংরক্ষিত আসনে ৮৪ জন নারী কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬।

গাজীপুর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে ব্যয় করতে পারবেন ৩০ লাখ ও কাউন্সিলররা এলাকা ও ভোটারের পার্থক্য অনুসারে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ করতে পারবেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মোট আয়তন ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গ কিলোমিটার। ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন ও নারী ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২৫। ভোটকক্ষ ২ হাজার ৭৬১টি।