শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ শুরু

>
  • এমপিওভুক্তির নতুন নীতিমালা হয়ে গেছে
  • শিগগির অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হবে
  • এ কাজের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে
  • তথ্য যাচাই-বাছাই করতে কমিটির খসড়াও প্রস্তুত

জাতীয় নির্বাচনের আগে আসন্ন অর্থবছরেই হাজারখানেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করবে সরকার। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজও শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রায় আট বছর বন্ধ থাকার পর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, এমপিওভুক্তির নতুন নীতিমালা হয়ে গেছে। এখন এর আলোকে শিগগিরই অনলাইনে এমপিও-প্রত্যাশিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হবে। এ জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে। আবেদনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (মাধ্যমিক) নেতৃত্বে একটি কমিটির খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে।

যেসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতন-ভাতা বাবদ সরকারি অংশ (শতভাগ মূল বেতন ও কিছু ভাতা) দেওয়া হয়, সেগুলোকে এমপিওভুক্ত বলা হয়। আর যেগুলো এমপিওভুক্ত নয়, সেগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, সারা দেশে কি পরিমাণ স্বীকৃত পাওয়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে এবং এর মধ্যে কতগুলো এমপিওভুক্ত হওয়ার মতো অবস্থায় আছে, সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ, যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনসহ আনুষঙ্গিক প্রাথমিক কাজ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন। গতকালই এই নির্দেশ দেওয়া হয়। অর্থ বিভাগের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যে কথাবার্তা হয়েছে, তাতে হাজারখানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে বলে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটেও সেভাবেই অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সচিব সোহরাব হোসাইন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কত প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে সেটা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বলা যাবে। আর কত প্রতিষ্ঠান হবে সেটা একেবারে সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে তাঁরা এমপিওভুক্ত করার কাজটি শুরু করেছেন। শিগগিরই আবেদন নেওয়া হবে।

নন-এমপিও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে এখনো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ওই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো লাগাতার কর্মসূচি করেছেন তাঁরা। এর আগে ১০ জুন থেকেই তাঁরা থেমে থেমে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। লাগাতার কর্মসূচির পাশাপাশি তাঁরা আমরণ অনশনে যাওয়ারও পরিকল্পনা করছেন। আজ বুধবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী।

বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাঁদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় সাড়ে নয় শ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে ২ হাজারেরও বেশি নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরও প্রায় দেড় শ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা হলো হাজারখানেক প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা।

আন্দোলনকারী শিক্ষকনেতা গোলাম মাহমুদুন্নবী প্রথম আলোকে বলেন, হাজারখানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে তাঁরা মানবেন না। তাঁরা চান স্বীকৃত পাওয়া সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হোক।