চট্টগ্রামে গ্যাসের সঙ্গে বাতাসও বিক্রি করে কর্ণফুলী!

>
  • অন্যদের বিরুদ্ধেও গ্যাসের সঙ্গে বাতাস বিক্রির অভিযোগ
  • একই অভিযোগ সিএনজি স্টেশনের বিরুদ্ধেও

চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্যাস বিতরণ সংস্থা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড যে পরিমাণ গ্যাস পেট্রোবাংলার কাছ থেকে কিনেছে, গ্রাহকের কাছে বিক্রি করেছে তার চেয়ে বেশি। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে ৬ থেকে ১১ ভাগের বেশি ‘সিস্টেম গেইন’-এর এমন তথ্য কোম্পানিটির নিরীক্ষিত হিসাবে দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কোম্পানিটি বাড়তি গ্যাস কোথায় পেল? গ্যাসের সঙ্গে গ্রাহককে বাতাস দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলীর বিরুদ্ধে।

শুধু কর্ণফুলী নয়, তিতাস গ্যাসসহ দেশের অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও গ্যাসের সঙ্গে বাতাস বিক্রির অভিযোগ আছে। একই অভিযোগ রয়েছে সিএনজি স্টেশনের বিরুদ্ধেও। এ কারণে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ঢাকায় কিছু সিএনজি স্টেশনকে শাস্তিও দেওয়া হয়। পরে সিএনজি স্টেশনমালিকদের মিলিত প্রতিবাদে এ অভিযান বন্ধ করে পেট্রোবাংলা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিতরণ মার্জিন ও ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে গণশুনানিকালে এসব তথ্য জানা যায়। গ্রাহককে কতটুকু গ্যাস দেওয়া হচ্ছে, তার সঠিক পরিমাপ জানতে বিইআরসি ২০১৫ সালে শিল্প গ্রাহকদের জন্য ইভিসি (ইলেকট্রনিক ভলিউম কারেক্টর) এবং আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রিপেইড মিটার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিল। এ আদেশের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করেনি দেশের পাঁচটি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। ফলে বিতরণ কোম্পানি গ্রাহককে কতটুকু গ্যাস সরবরাহ করছে, তা জানার উপায় থাকছে না।

গণশুনানিতে কর্ণফুলীর কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তাঁদের ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ ‘সিস্টেম গেইন’ হয়েছে। এর পরের দুই বছর সিস্টেম গেইনের পরিমাণ আরও বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৬৯ ও ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে কর্ণফুলীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে শিল্প গ্রাহকদের ৭৮০টি ইভিসি মিটার চাহিদার স্থলে তারা ৩১০টি স্থাপন করেছে। আর ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ৩০ হাজার মিটার স্থাপন করা হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক গ্রাহক যতখানি গ্যাস ব্যবহার করছেন, বিল দিচ্ছেন তার চেয়ে অনেক বেশি। এটিই হচ্ছে সিস্টেম গেইনের রহস্য। একে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা বলে মনে করেন ক্যাবের প্রতিনিধি।

শুনানিতে বিতরণ কোম্পানিটি জানায়, বর্তমানে নতুন আবাসিক সংযোগ প্রদান বন্ধ থাকলেও শিল্পে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার জন্য ৬৭৬টি চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। এই নতুন গ্রাহকসহ তাদের বিতরণ এলাকার চাহিদা ৩৪ কোটি ঘনফুট। এলএনজি এলেও পাইপলাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে ২০ কোটি ঘনফুটের বেশি সরবরাহ পাওয়া যাবে না। ফলে ঘাটতি থাকবে ১৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস।

১২ জুন শুরু হয়েছে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ওপর বিইআরসির গণশুনানি, শেষ হবে ২৯ জুন। গণশুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, মাহমুদুউল হক ভূঁইয়া প্রমুখ অংশ নেন।