হবিগঞ্জে হত্যা মামলায় আ.লীগ সভাপতিসহ ১১ জন কারাগারে

প্রতিকী ছবি
প্রতিকী ছবি

হবিগঞ্জে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আল আমিন হত্যার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিছবাহ উদ্দিন ভূইয়াসহ একই দলের ১১ জন নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার পুলিশ তাঁদের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হবিগঞ্জে আজমিরীগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করলে বিচারক তাঁদের কারাগারে পাঠান।

নিহত ব্যক্তির ভাই ও মামলার বাদী দাবি করেন, তাঁর ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পাশাপাশি এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আগামী ২৫ জুলাই উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন এলাকাবাসী।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতর আলী মিয়া ৩১ মে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর এ মৃত্যুতে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য হয়। 

নির্বাচন কমিশন আগামী ২৫ জুলাই এ পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে।

এ নির্বাচন ঘিরে এবং দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ ও ঘোষণার জন্য গত সোমবার আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়। এ বর্ধিত সভা চলা অবস্থায় মৃত উপজেলা চেয়ারম্যান আতর আলী মিয়ার ছেলে আল আমিন মিয়ার সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতি মিছবাহ উদ্দিন ভূইয়ার সমর্থকদের প্রার্থিতা নিয়ে কথা-কাটাকাটি থেকে একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আল আমিন (৩৫) গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আল আমিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আজমিরীগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা। একপর্যায়ে আল আমিন মিয়ার সমর্থকেরা দলের সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া ও তাঁর বড় ভাই আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূইয়াসহ ১১ জনকে ঘটনাস্থলে আটক করে রাখেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে যায়।

সেখানে থাকা অবস্থায় নিহত আল আমিনের ভাই আলাউদ্দিন বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে আজমিরীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় তিনি দাবি করেন, তাঁর ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। মামলায় তিনি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া ও তাঁর বড় ভাই হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হকসহ ২২ জনকে আসামি করেন। পাশাপাশি এ দুই সহোদরসহ পুলিশ যুবলীগ নেতা মুফাজ্জাল ভূইয়া, আপেল মিয়া তালুকদার, ইব্রাহিম মিয়া, মতিউর রহমান, পলাশ ভূইয়াসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বুধবার হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে। এর আগে তাঁরা হবিগঞ্জ সদর থানায় নিরাপত্তা হেফাজতে ছিলেন।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সদরের অধিবাসী কৃষক সমুজ আলী বলেন, উপনির্বাচন হওয়ার আগেই সরকারদলীয় প্রার্থী নির্বাচন করা নিয়ে যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, এতে করে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। উপনির্বাচন নিয়ে এলাকাবাসী শঙ্কিত রয়েছেন বলেও তিনি জানান।

আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি ইকবাল হোসেন আজ বুধবার প্রথম আলোকে জানান, মামলায় ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ১১ জনকে আজ বুধবার গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করেন। আদালত তাঁদের কারাগারের পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই দিনই তাঁদের আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।