চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিয়ে নগর আ. লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় বাগবিতণ্ডা

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় সিটি মেয়র মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সঙ্গে তুমুল বাগবিতণ্ডা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার বিকেলে দারুল ফজল মার্কেটের দলীয় কার্যালয়ে এই সভা হয়। মেয়র নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিডিএর চেয়ারম্যান কোষাধ্যক্ষ।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, নগরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, জলাবদ্ধতা ও নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোডের বেহাল দশা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম। তিনি বৈঠকে বলেন, সামনে নির্বাচন। কিন্তু তিনটি সমস্যার ব্যাপারে নগরবাসীর কাছে আওয়ামী লীগ কী বার্তা দেবে?

খোরশেদ আলমের বক্তব্যের সূত্র ধরে সিটি মেয়র নাছির উদ্দীন বলেন, জাইকার অর্থায়নে এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোডের নির্মাণকাজ চলছে। আগামী মে মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হবে। এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তি থাকবে না।

মেয়রের বক্তব্যের পর খোরশেদ আলম বলেন, কিন্তু দুটি সড়কই যান চলাচলের অনুপযোগী। দুদিন আগে পোর্ট কানেকটিং রোডের গর্তে গাড়ির চাকা আটকে গেলে ১০ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। এই অবস্থায় ইট ফেলে গর্ত ভরাটের মাধ্যমে সড়ক দুটি গাড়ি চলাচলের উপযোগী করতে হবে। নইলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।

নগর কমিটির সহসভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, চট্টগ্রামে খুনোখুনি বেড়ে গেছে। নির্বাচনের আগে এসব বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা অনেক পুরোনো সমস্যা। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু কবে এই সমস্যা থেকে নগরবাসী রেহাই পাবে তা নির্বাচনের আগে আমরা ভোটারদের জানাতে চাই। একই সঙ্গে নগরের এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেকটিং রোড প্রায় অকার্যকর। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ছাড়াও আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। সড়ক দুটি যান চলাচলের উপযোগী করে তুলতে মেয়রের দৃষ্টি কামনা করেছি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল জলাবদ্ধতা নিয়ে সিডিএর চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বৈঠকে বলেন, নগরের ষোলশহর সুন্নি মাদ্রাসাসহ কিছু এলাকায় খাল কাটা হয়েছে। সেখানকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আগামী বছর বর্ষার আগে নগরে জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকবে না। তাঁর বক্তব্যের পর মেয়র নাছির উদ্দীন বলেন, নগরবাসীকে ভুল বার্তা দেওয়া উচিত নয়। তাঁর প্রশ্ন, আগামী বছর কি জলাবদ্ধতা দূর হবে? তখনই মেয়র ও সিডিএর চেয়ারম্যান বাগবিতণ্ডায় জড়ান।

এ বিষয়ে মেয়র নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, জলাবদ্ধতা একদিনের সমস্যা নয়। এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সমস্যা সমাধানে বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে জলাবদ্ধতা আগামী বছর কেটে যাবে বলে দায়িত্বশীল ব্যক্তি হয়ে ছালাম সাহেব তা বলতে পারেন না। নগরবাসীকে ভুল বার্তা দেওয়াও উচিত নয়।

এ বিষয়ে সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সরকার দুই প্রকল্পে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ করার কথা।

বৈঠকে নগরের মোহরা, চান্দগাঁও, পাথরঘাটা, উত্তর পাহাড়তলী, সরাইপাড়া ও গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এই ওয়ার্ডগুলোতে পাল্টাপাল্টি কমিটি বা মৃত্যুজনিত কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ওয়ার্ডগুলোতে কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ছয়টি ওয়ার্ডে একক কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি পুনর্গঠনের জন্য সেখানে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।