গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে: জাহাঙ্গীর

নির্বাচনী প্রচারনায় আওয়ামী লীগমনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: প্রথম আলাে
নির্বাচনী প্রচারনায় আওয়ামী লীগমনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: প্রথম আলাে

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার আজ রোববার শেষ হচ্ছে। আর তাই শেষ মুহূর্তে যতটা পারা যায় ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন প্রার্থীরা। সকাল থেকেই দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা।

নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগমনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম আজ সকালে প্রচার শুরু করেছেন গাজীপুরের কাউলতিয়া ইউনিয়নের সালনা থেকে। সেখানে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পথসভায় শেষ দিনের প্রচারের প্রথম পথসভায় বক্তব্য দেন। পথসভায় অংশ নেওয়া হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে মহাসড়কের এক পাশ বন্ধ হয়ে যায়। নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন।

পথসভায় জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্বাচনে নৌকার পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গাজীপুরের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবেন।

এই নির্বাচনে কয়েক দিনের প্রচারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যেখানে গেছি, নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব দেখেছি। বিগত দিনে গাজীপুর উন্নয়নবঞ্চিত হয়েছে। গাজীপুরের মানুষ আর অনুন্নয়নের পথে থাকতে চান না। তাঁরা নৌকার পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি করেছেন।’

নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

এর আগেও জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে বিএনপির নানা অভিযোগকে ‘অপপ্রচার’ বলে মন্তব্য করেছেন। প্রশাসনকে ব্যবহার করে সরকারি দল আওয়ামী লীগ সুবিধা নিচ্ছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে বলে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন বিএনপিমনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট না করার আহ্বান জানান বিএনপির প্রার্থীর প্রতি।

জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে এই পথসভায় অংশ নেন খুলনা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক।

সালনার পর বেলা ১১টার দিকে গাজীপুর চৌরাস্তায় নিজ এলাকা বাসনে পথসভা করেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই পথসভায় এত বেশিসংখ্যক লোকের উপস্থিতি হয় যে তা জনসভায় রূপ নেয়।

সভায় ভোটপ্রার্থনা করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাকে সুযোগ দিন, বাসযোগ্য শহর করে দেব। এ এলাকায় আমি বেড়ে উঠেছি। এ এলাকার মানুষের কাছে আমার অধিকার আছে। এই এলাকার মানুষকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মান দিয়েছেন। তিনি আমাকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করেছেন। দেশের বৃহত্তর এই সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ৭০ বছরের পুরোনো দল। এ দলের ঐতিহ্য আছে। আমাদের সেই সম্মান রক্ষা করতে হবে।’

জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, বিএনপির অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে জনগণ গতবার গাজীপুরের সিটি মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন বিএনপি প্রার্থীকে। এর বিনিময়ে জনগণ কিছুই পায়নি। এখন রাস্তার পানি লোকজনের বাড়িতে ঢোকে। রাস্তাঘাট বলতে কিছু নেই।

এলাকার উন্নয়নে তাঁকে ভোট দেওয়ার ওপর গুরুত্ব তুলে ধরে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সরকার রয়েছে। স্থানীয় সরকারেও আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিত্ব দরকার। যাতে করে এখানের জনগণের কথা সরকারের কানে পৌঁছায়।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাকে একবার সুযোগ দিন, আমি আপনাদের সমস্ত দুঃখ কষ্টের কথা কেন্দ্রের কাছে পৌঁছাব। গাজীপুরকে মানুষের বাসযোগ্য শহর করব। আমি মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আর দুদিন পর নৌকার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আমাকে সেই সুযোগ দিন।’

মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘উনি পাঁচবার জনপ্রতিনিধি ছিলেন। দুবার পৌর মেয়র, দুবার সাংসদ ও একবার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর প্রতিটি নির্বাচন ছিল রক্তাক্ত। তিনি মানুষের রক্ত ঝরিয়ে নির্বাচন করেছেন। বিনিময়ে এলাকার মানুষকে কিছু দেননি।’
খুলনা সিটির মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক গাজীপুরের ভোটারদের কাছে জাহাঙ্গীর আলমের জন্য ভোট প্রার্থণা করেন। তিনি বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগকে ভোট দিন’।

জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে জানান, আজ নির্বাচনী প্রচারের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি জনসংযোগ করবেন। কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর কয়েকটি পথসভায় বক্তব্য দেবেন।

এর আগে ইসির তফসিল অনুসারে গত ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তির প্রজ্ঞাপন ও নির্বাচনের তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের তফসিলের কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন পৃথক তিনটি আবেদন করে। শুনানি শেষে ১০ মে আপিল বিভাগ এই নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করে ২৮ জুনের মধ্যে এ নির্বাচন করতে বলেন। এরপর ১৩ মে ইসির এক সভায় ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।