ঢাকার আদলে খুলনায় শহীদ মিনার

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে তৈরি এই শহীদ মিনারেই আজ রাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জনাবে খুলনাবাসী। ছবি: প্রথম আলো
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে তৈরি এই শহীদ মিনারেই আজ রাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জনাবে খুলনাবাসী। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে নতুন শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে। একুশের প্রথম প্রহর আজ বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মধ্যে দিয়ে নবনির্মিত এই শহীদ মিনারের উদ্বোধন হবে।

বিকেলে হাদিস পার্কে গিয়ে দেখা যায়, শ্রদ্ধা জানানোর জন্য প্রস্তুত ভালোবাসার শহীদ মিনার। শহীদ মিনারকে ঘিরে ২১টি সার্চলাইট এবং অসংখ্য হাই এনার্জি ডিসচার্জ (এইচইডি) বাতি লাগানো হয়েছে।

নতুন শহীদ মিনার দেখে খুলনার সরকারি মুহসীন কলেজের ছাত্রী হেলেনা আক্তার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মতোই এই মিনার। খুলনায় এমন শহীদ মিনার দেখে ভালো লাগছে।’ খুলনার আযম খান কলেজের ছাত্র নাজিম আহমেদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে চাইছিলাম খুলনায় একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ মিনার হবে। আজ সেটি পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’ 

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ রাতে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষকে লোয়ার যশোর রোডের (শঙ্খ সিনেমা হলের সামনের সড়কের দিকের গেট) গেট দিয়ে হাদিস পার্কের এই শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে হবে। শ্রদ্ধা প্রদান শেষে পিসি রায় সড়কের সামনের গেট দিয়ে বের হয়ে থানার মোড় এবং কেসিসি সুপার মার্কেট মোড় হয়ে যে যার গন্তব্যস্থলে ফিরে যাবেন। খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে নগরের শহীদ হাদিস পার্কে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। তত্কালীন খুলনা পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ভাষাসৈনিক গাজী শহিদুল্লাহ শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। পৌরসভার অর্থে শহীদ মিনারটি তৈরি করা হয়েছিল। নির্মাণের পর থেকে গত ৪০ বছর এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা প্রদান করে আসছেন খুলনাবাসী। কিন্তু শহীদ মিনারটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় হাদিস পার্কেই নতুন একটি শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়  সিটি করপোরেশন।

খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কের শহীদ মিনার আধুনিকায়নের প্রকল্প গ্রহণ করেন। তিনি মেয়র থাকাকালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। খুলনার ঐতিহ্যবাহী শহীদ হাদিস পার্ক, শহীদ মিনার ও তত্সংলগ্ন পুকুর আধুনিকায়ন প্রকল্প নামে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর শহীদ মিনারের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় আট কোটি ৪১ লাখ টাকা। শহীদ মিনারটির আয়তন ছয় হাজার ৮৬০ বর্গফুট। শহীদ মিনারে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধারা যাতে সহজে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, সেজন্য একটি র্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় শহীদ মিনার। মার্চে প্রকল্পের অন্যান্য কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফা সময় বাড়িয়ে তা নির্ধারিত হয় চলতি বছরের জুনে।

গত ১৬ জানুয়ারি খুলনার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বর্তমান সিটি মেয়র মো. মনিরুজ্জামান ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। মেয়র মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭৪ সালে তত্কালীন চেয়ারম্যান গাজী শহীদুল্লাহ শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন। ২০১২ সালে তত্কালীন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক আধুনিক শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বর্তমান সময়ে শহীদ মিনারের কাজ শেষ হয়। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনার প্রস্তুত করা হয়েছে। আজ রাতে খুলনাবাসী পরিপূর্ণ শ্রদ্ধায় তাঁদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে পারবেন। খুলনার নবনির্বাচিত এই মেয়র বলেন, নতুন শহীদ মিনারটি খুলনাবাসীর গর্ব হিসেবে পরিচিতি পাবে। এটি দেখলে খুলনাবাসীর মন ভরে উঠবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।