এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, তা অত্যন্ত চমৎকার। এই বাজেট নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারেনি। এই বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার আগামী ১০০ বছরের পরিকল্পনা করেছে।

টানা ১০ বার বাজেট ঘোষণা করায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা চান, অর্থমন্ত্রী আরও বাজেট দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরপর দুবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। তাঁরা চান, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক।

২০০৯ সালে দিনবদলের সনদ দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। সে কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমানুষের দিনবদল শুরু হয়েছে। সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বাজেট দেওয়া হয়েছে।

অর্থনৈতিক সক্ষমতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে বাজেট করার জন্য বিদেশিদের কাছে ধরনা দিতে হতো। এ ছাড়া বাজেটই হতো না। এখন উন্নয়ন বাজেটের ৯০ ভাগ নিজেদের অর্থায়নে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে এ বছর চূড়ান্ত প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৭৮ ভাগে দাঁড়াবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১০ বছর আগে প্রবৃদ্ধির বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৫৮তম। এখন ১৬টি দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন ভারত, চীনের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে এসেছে। এই অর্জনের পেছনে রয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রচেষ্টা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। ‘ফ্ল্যাট ডিজাইন’ করলে এত দিনে পদ্মা সেতু হয়ে যেত। রেল যুক্ত করে দোতলা সেতু করার পরিকল্পনা করায় সময় একটু বেশি লাগছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল সেতু যুক্ত হওয়া এবং জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ আগে দেওয়া হতো দেড় গুণ। এখন তিন গুণ দেওয়া হচ্ছে—এ কারণে পদ্মা সেতুর খরচ বাড়ছে। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। যে টাকাই প্রয়োজন হোক, পদ্মা সেতু হবে। তাঁরা চান উন্নত মানের কাজ করতে, যাতে শত বছর টিকে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজারের জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। বাজেটে এ বিষয়ে কিছু নেই বলে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। যেহেতু সুস্থভাবে পুঁজিবাজার চলছে, সেখানে করার কী আছে। পুঁজিবাজার এখন বিশ্বের বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যা-ই বলুক, চলমান মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। মাদকমুক্ত দেশ গড়তে হবে।

কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ছিল। হঠাৎ করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করল। তারা গ্রাম থেকেই এসেছে। তারাই যদি কোটা না চায়, তাহলে এর কী দরকার—এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। কীভাবে কার্যকর করা যায়, তা ঠিক করবে। এরপর মফস্বলের কেউ চাকরি না পেলে সরকারকে দায়ী করতে পারবে না।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার পক্ষে বক্তব্য দেওয়ায় বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা থাকতে হবে। অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই তো আজকে স্বাধীন। তাঁদের অবদানেই তো আজকে এই দেশ পেয়েছি।’

কৃচ্ছ্রসাধন করে বড় হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় টাকা দিতে পারেননি বলে তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এমআইটিতে দুই সেমিস্টার পড়ে আর পড়তে পারেননি। পড়ার মাঝে বিরতি দিয়ে চাকরি করে আবার পড়াশোনা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব থেকে দুঃখের কথা, আমার ছেলে (সজীব ওয়াজেদ জয়) বেঙ্গালুরুতে পড়ল। বেঙ্গালুরু ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েট হলো। এরপর কিছুদিন চাকরি করল। এরপর আরও উচ্চশিক্ষার জন্য এমআইটিতে (যুক্তরাষ্ট্রে) চান্স পেল। আমি তার শিক্ষার খরচটি দিতে পারিনি। দুটি সেমিস্টার পড়ার পর নিজে কিছু দিল, আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধব সহযোগিতা করল। যার জন্য যেতে পারল। আর আব্বার বন্ধু আমার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন। উনি বলতেন, তুমি পলিটিকস করো, এটা আমার ওপর ছেড়ে দেও। তিনি না থাকলে আমি পড়াতে পারতাম না। এমনকি মিশনারি স্কুলে তারা পড়েছে। সাত দিনের মধ্যে সবজি বা ডালভাত খেতে হতো, এক দিন শুধু মাংস খেতে পারত। এভাবে কৃচ্ছ্রসাধন করে এরা বড় হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন এমআইটিতে দিতে পারলাম না। আমি প্রধানমন্ত্রী, আমার দ্বিধা হলো, কাকে বলব টাকা দিতে বা কীভাবে আমি টাকা পাঠাব বুঝতে পারিনি। কার কাছে দেনা হব। আমার কারণে তার পড়া হলো না। দুটি সেমিস্টার করে তাকে বিদায় নিতে হলো। এরপর সে চাকরিতে ঢুকল।’