রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে গোপন চুক্তি: নিজের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে জাতিসংঘ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমার সরকার এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মধ্যে সম্পাদিত গোপন সমঝোতা স্মারকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য অবিলম্বে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া তথ্যমতে উল্লিখিত সমঝোতা স্মারক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির পূর্বশর্ত হিসেবে নিজ দেশে স্বাধীনভাবে চলাচল ও “মিয়ানমারের স্বাধীন নাগরিক” হিসেবে তাদের অধিকার লাভের দীর্ঘদিনের ন্যায্য দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এ ধরনের চুক্তি বাস্তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাকে পদদলিত করে তাদের চিরতরে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ ছাড়া আর কিছুই নয়।’ তিনি বলেন, সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে এই গোপন সমঝোতার পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ না করায় প্রত্যাবাসনসহ সার্বিকভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর নির্যাতন বিষয়ে জাতিসংঘের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিষয়টি মিয়ানমারে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াং লির সাম্প্রতিক বক্তব্যেও প্রতিফলিত হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এই গোপন সমঝোতা স্মারক এবং তা প্রকাশে লুকোছাপা ও গড়িমসি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সফরে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও পরস্পরবিরোধী। মহাসচিব তাঁর বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের আদি নিবাসী উল্লেখ করে অনুকূল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে তাদের যথাযোগ্য মর্যাদায় ফিরিয়ে নেওয়ার এবং সংঘটিত অপরাধের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, এ ধরনের স্ববিরোধী ও নীতিবিবর্জিত গোপন সমঝোতা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে জাতিসংঘের ব্যর্থতাকেই তুলে ধরে এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় জাতিসংঘের আন্তরিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বেশ আগেই তাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে আগাম একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন জাতিসংঘের মিয়ানমার মিশন কর্তৃক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনার কথা তুলে ধরেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের মতো জাতিগত নিধনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে পর্যাপ্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার না করে নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ থেকে বরং বাস্তবে নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রমকে পুঁজি করে অর্থসহায়তার সুবিধা অন্বেষণ জাতিসংঘের উদ্দেশ্য কি না, এ প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। জাতিসংঘের উচিত এসব প্রশ্নের উত্তরসহ মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য এবং এর আগে গোপন করা বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রকাশ করা।