চাপে পড়ে ছেলের হত্যা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন মা

থানায় হত্যার পর এক কিশোরকে ক্রসফায়ারে নিহত দেখানোর গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ওয়ারী থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে পুলিশের দাবি, গত ৬ এপ্রিল রাতে ওয়ারীর টয়েনবি সার্কুলার রোডের একটি গলিতে ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশ ও ডাকাতদের পাল্টাপাল্টি গুলির মধ্যে ডাকাতদের একজন মারা যায়। 

পুলিশ বলছে, নিহত ব্যক্তির নাম ‘ছোট’ রাকিব। বয়স ২২ বছর। খুনসহ একাধিক ছিনতাইয়ের মামলায় তাঁর নাম আছে। কিন্তু নিহত রাকিবের পরিবারের দাবি, তার বয়স ১৫ বছর এবং নাম রাকিব হাওলাদার।

এ ঘটনায় নিহত রাকিবের মা রীতা হাওলাদার গত ১১ এপ্রিল পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করেছিলেন। আসামি ছিলেন ওয়ারী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম, থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেলিম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জ্যোতিষ চন্দ্র রায় ও পুলিশের সোর্স মোশাররফ হোসেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছিল। পরে পুলিশ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং ওপর মহলের প্রচণ্ড চাপের মুখে মা-ই কিশোর সন্তানের হত্যা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। যদিও আদালতে তিনি বলেছেন, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে। তাঁর কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। তিনি আল্লাহর কাছে বিচার চান। আদালত ইতিমধ্যে মামলার সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘যদি ধরে নিতে হয় রাকিবের মা ভয়ে পিছিয়ে গেছেন, আর মামলা চালাতে চাননি, তাহলে এটাও আমাদের জন্য অশনিসংকেত।’ অন্যদিকে, চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবদুল হালিম বলেন, ‘পুলিশ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভয়ভীতি দেখানোর পরিপ্রেক্ষিতে যদি মামলা প্রত্যাহার হয়ে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের ও বিচার বিভাগের দায়িত্ব ছিল বিষয়টি তদন্ত করার।’

ঘটনা যেভাবে ঘটে
নিহত রাকিবের পরিবার ও প্রতিবেশীরা বলছেন, দুটি সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছে রাকিব। তার বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় একটি ছিনতাইয়ের মামলা আছে। কোনো হত্যা মামলা নেই। রাকিবের পরিবার বলছে, ওয়ারী থানার এএসআই জ্যোতিষ চন্দ্র রায় গত ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাপ্তানবাজার মুরগিপট্টির মোড় থেকে তাকে ধরে নিয়ে যান। খবর পেয়ে রাকিবের মা রীতা হাওলাদার পরদিন থানায় যান এবং ছেলেকে সেখানে দেখতে পান। তিনি জ্যোতিষ চন্দ্র রায়ের কাছে ছেলেকে ধরে আনার কারণ জানতে চান। জ্যোতিষ রায় তাঁকে বলেন, রাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দেবেন। রাকিবের বাবা মহসিন হাওলাদারও মোবাইলে কথা বলেন এএসআই জ্যোতিষের সঙ্গে। থানায় আরেক পরিচিত এসআই শাহ আলমকে ঘটনা জানিয়ে সহায়তা চান রাকিবের মা।

নিহত রাকিব। ছবি: সংগৃহীত
নিহত রাকিব। ছবি: সংগৃহীত

আদালতে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, বাদী রীতা হাওলাদার থানায় যখন এএসআই জ্যোতিষের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন ওসির কক্ষ থেকে রাকিবের চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। রাকিবের মা থানায় আছেন—এমন তথ্য গিয়ে ওসিকে জানান জ্যোতিষ। রীতা হাওলাদার ওসি রফিকুলের কক্ষে গিয়ে দেখতে পান, রাকিবের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা। পরনে প্যান্ট নেই। শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন। ওসি রফিকুল এবং ওসি (তদন্ত) সেলিম তাঁর ছেলে রাকিবকে লাথি মারছেন। পরে এএসআই জ্যোতিষ, ওসি (তদন্ত) সেলিম ও সোর্স মোশাররফ থানা থেকে রাকিবের মাকে চলে যেতে বলেন। পরদিন রীতা হাওলাদার থানার কনস্টেবল মো. আলীর কাছে রাকিবের জন্য এক প্যাকেট খাবার দেন। কিন্তু ওসি সেই খাবার ফেরত দেন এবং জানাতে বলেন, থানায় রাকিব নামের কেউ নেই।

রাকিবের মা রীতা প্রথম আলোকে বলেন, ছেলেকে কিছু খাওয়াতে চান বলে তিনি জ্যোতিষকে জানান। জ্যোতিষ তুইতোকারি করে তাঁকে থানা থেকে চলে যেতে বলেন। রাকিবকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে জ্যোতিষ বলেন, ‘তোর ছেলের কাছে অনেক তথ্য আছে। তথ্য নেওয়ার পর ছেড়ে দেব।’ থানা থেকে চলে না গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করার হুমকি দেন ওসি (তদন্ত) সেলিম। এরপর ভয়ে তিনি চলে আসেন। সেদিন সন্ধ্যা সাতটার পরে আর থানায় ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে এএসআই জ্যোতিষ বলেন, ‘আমি কোনো কথা বলব না। এ ব্যাপারে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবে।’

পরদিন ৬ এপ্রিল শুক্রবার সকালে রীতা হাওলাদার আবার থানায় যান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘থানার গেটে পৌঁছে শুনি, লোকজন বলাবলি করছে, আহা রে, ছেলেটারে মাইরা ফেলাইছে। থানা এখন ধুইতাছে। মরাটারে জয়কালী মন্দিরের কাছে নিয়ে আবার ক্রসফায়ার দিছে।’ রীতা হাওলাদার বলেন, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছেলের লাশ গ্রহণের সময় দেখতে পান, ছেলের ডান হাত ভাঙা, মাথা ফাটা, পেটে আঘাতের চিহ্ন ও দুটি পায়ের জোড়াগুলো থেঁতলানো।

বাদী জানান, যেদিন মামলা করা হয়, সেদিনই তাঁকে আদালত এলাকা থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। পুলিশ মারধর করে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ করেন রাকিবের মা। আদালতকে লিখিতভাবে তিনি জানান, ১৯ এপ্রিল বিকেলে এসআই জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন তাঁর বাসায় এসে কাগজে ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বলেন। রাজি না হলে বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বাদীর চোখে আঘাত লাগে। জোর করে সই নিয়ে যায়। আদালতের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে বাদী সেদিন বলেন, আসামিরা থানার দায়িত্বে থাকলে তাঁর পক্ষে আর মামলা চালানো কিংবা সাক্ষ্য-প্রমাণ আদালতে হাজির করা সম্ভব নয়।

পুলিশের দাবি, ওয়ারী থানার টিপু সুলতান রোডের কাছে টয়েনবি সার্কুলার রোডে ডাকাতদের গুলিতে নিহত হয় রাকিব। ছবি: আবদুস সালাম
পুলিশের দাবি, ওয়ারী থানার টিপু সুলতান রোডের কাছে টয়েনবি সার্কুলার রোডে ডাকাতদের গুলিতে নিহত হয় রাকিব। ছবি: আবদুস সালাম

এরপর ১০ মে বাদী মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। অবশ্য এর আগে গত ৩০ এপ্রিল বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বাদী রীতা বলেছেন, রাকিবকে হত্যা করা হয়েছে। আবার এটাও বলেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তাঁর। মামলা তোলা প্রসঙ্গে রীতা প্রথম আলোকে বলেছেন, মামলা করার পর পুলিশ যে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছিল, তা লিখিতভাবেই তিনি জানিয়েছিলেন। বড় বড় জায়গা থেকে চাপ এসেছে। মামলা না তুললে এলাকায় থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে আদালতের কাছে তিনি বলেন, রাকিবকে হত্যা করা হলেও আর মামলা চালাতে চান না। আল্লাহর কাছেই তিনি বিচার চান।

মামলার পর গত ১৪ মে ওয়ারী থানার ভিডিও ফুটেজ (৪ এপ্রিল দিবাগত রাত ১০টা থেকে ৬ এপ্রিল সকাল ৮টা) সিডি আকারে আদালতে জমা দেওয়ার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী জোনের উপকমিশনারকে (ডিসি) নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে থানার সব পুলিশের নাম ও ছবি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কর্মকর্তা। উল্লিখিত সময়ে কোন পুলিশ সদস্য কী গাড়িতে কী পোশাকে দায়িত্বরত ছিলেন, সেই তালিকাও চান আদালত। পাশাপাশি নিহত রাকিবের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাগজ চান আদালত।

এ ব্যাপারে ওয়ারী জোনের ডিসি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত যা চেয়েছিলেন, সবই দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাঠানো রাকিবের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, তার বিরুদ্ধে (রাকিব) থাকা মামলার কাগজপত্র, সহযোগী আসামিদের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি মহানগর দায়রা আদালতে পাঠানো হয়।

যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে ওয়ারী থানার কোনো ভিডিও ফুটেজ আদালতে দেওয়া হয়েছিল কি না, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।

৫ জুলাই রীতা হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা করার পর পুলিশ হত্যার হুমকি দিয়েছিল মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য। প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও চাপ দিয়েছিলেন মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য, না ওঠালে এলাকাছাড়া করবেন। বাধ্য হয়ে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আদালতে বলে এসেছি, আমার ছেলে রাকিবকে থানাতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। আমি বিচার চাই। আবার আমি মামলা চালাতে চাই।’

রীতার আইনজীবী মোশতাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর থেকে পুলিশ বাদীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। বিষয়টি আদালতকেও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আপস করার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হয়।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর বাদী রীতা হাওলাদার এবং রীতার বাবা আবদুল লতিফ সরকারের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। গত ২৩ মে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অভিযোগকারীর মামলা প্রত্যাহারের দরখাস্ত হতে প্রতীয়মান হয় যে অভিযোগকারী মামলা চালাতে আগ্রহী নন।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ জুন আদালত বলেছেন, বিচার বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন ও মামলা প্রত্যাহারে বাদীর দরখাস্ত থেকে প্রতীয়মান যে বাদী মামলা চালাতে আগ্রহী নন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা যায়, মামলাটি অগ্রসর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, অগ্রসর হলেও মামলার কোনো ফলাফল হবে না। মামলাটি নথিজাত করে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন আদালত।

রাকিবের মায়ের দাবি, ওয়ারী থানায় রাকিবকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ছবি: আবদুস সালাম
রাকিবের মায়ের দাবি, ওয়ারী থানায় রাকিবকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। ছবি: আবদুস সালাম

মামলা প্রত্যাহারে চাপ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কাউকে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি।’ বর্তমানে রাজধানীর বাড্ডা থানায় ওসির দায়িত্বে আছেন।

রাকিব হাওলাদারের নানা আবদুল লতিফ সরকার ওয়ারীর ৩৮ নম্বর ওয়ার্ল্ডের কাপ্তানবাজার ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০ বছর ধরে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন। লতিফ সরকার বলেন, ‘আমাদের নেতা মহিউদ্দিন মহী ভাইয়ের ভাগনে তালহা খুনে জড়িত ছিল রাকিব নামের এক ছিনতাইকারী। কিন্তু পুলিশ আমার নিরীহ নাতি রাকিবকে থানায় ধরে নিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলে। পরে ক্রসফায়ার দেখিয়েছে। বাস্তবে সে তালহা খুনে জড়িত ছিল না। মামলা প্রত্যাহার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন আপস করতে। পুলিশও কথা বলেছে। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, নানা চাপ ছিল।’


আসামি মোশাররফ ও কিছু প্রশ্ন

রাকিবের বাবা মহসিন হাওলাদার ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করেন। তিনি দুটি সিনেমায় অর্থ লগ্নি করেন। কিন্তু দুটিতেই বড় লোকসান হওয়ায় একেবারে পথে বসে যান। বছর তিনেক আগে জয়কালী মন্দিরের সামনের রাস্তায় একটি টং দোকান তুলে ছেলে রাকিবকে বসিয়ে দেন। সে দোকানে চা, কলা, বিস্কুট বিক্রি করত। একই জায়গায় পুলিশের সোর্স মোশাররফেরও দুটি অবৈধ দোকান আছে। জয়কালী মন্দিরসংলগ্ন এলাকায় হানিফ উড়ালসড়কের নিচ ও আশপাশে এমন ৩০-৩৫টি টং দোকান আছে। দোকানগুলো থেকে থানা-পুলিশের হয়ে প্রতিদিন ৩০ টাকা করে চাঁদা তোলেন মোশাররফ।

রাকিবের মা দাবি করছেন, বছর দেড়েক আগে সোর্স মোশাররফ তাঁর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নেন। কিন্তু টাকা শোধ করতে গড়িমসি করায় বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে তিনি মোশাররফকে অপমান করেন। এরপর থেকে মোশাররফ তাঁদের পেছনে লাগেন। রাকিবের বাবা মহসিনের দাবি, প্রতিদিন চাঁদা দিলেও মোশাররফের সঙ্গে সমস্যা হওয়ার পর থেকে ওয়ারী থানা-পুলিশ একাধিকবার তাঁর টং দোকানের বিরুদ্ধে নন-প্রসিকিউশন (অধর্তব্য) মামলা করেছে। এসব মামলায় আদালত ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা জরিমানা করতে পারেন। আর আসামি হাজির না হলে পরোয়ানা জারি করেন। রাকিবের বাবার নামে এমন একটি পরোয়ানাও ছিল।

রাকিবের পরিবার বলছে, শিশুশিল্পী হিসেবে রাকিব দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছে। ছবি: সংগৃহীত
রাকিবের পরিবার বলছে, শিশুশিল্পী হিসেবে রাকিব দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছে। ছবি: সংগৃহীত

সরেজমিনে দেখা যায়, রাকিবের মৃত্যুর পর থেকে হানিফ উড়ালসড়কের নিচে থাকা সোর্স মোশাররফের দোকান বন্ধ রয়েছে। এক মাস ধরে তাঁকে এলাকায় দেখাও যাচ্ছে না। সেখানে অন্য একাধিক টং দোকানের মালিক প্রথম আলোকে জানান, সোর্স মোশাররফ তাঁদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৩০ টাকা করে চাঁদা নেন। দোকান থেকে চাঁদা তোলার কথা স্বীকার করেন মোশাররফ হোসেন। চাঁদার টাকা কাকে দিতেন, জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশকে।’

রাকিবকে ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন মোশাররফ। তবে দোকানের বিরুদ্ধে মামলা করা নিয়ে রাকিবের বাবা-মায়ের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব হয় স্বীকার করে মোশাররফ বলেন, ‘পুলিশের সামনেই রাকিবের মা আমাকে জুতা ছুড়ে মেরেছিলেন। তবে আমি তাঁর কাছ থেকে কোনো টাকা ধার নিইনি।’ রাকিব কীভাবে মারা গেছে, তা জানেন না দাবি করে মোশাররফ বলেন, ‘শুনেছি ক্রসফায়ারে মারা গেছে।’ রাকিবের মৃত্যুর পর পুলিশের করা মামলায় তাঁর ছেলে রাজীবের সাক্ষী হওয়ার বিষয়ে মোশাররফ বলেন, সেই রাতে সে দোকানে ছিল। পুলিশ ডেকে নিয়ে সাক্ষী করেছে। কয়েক দিন আগে ছেলেকে ওমানে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেও জানান মোশাররফ।

আপনার দোকান বন্ধ, এলাকায়ও থাকছেন না; কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা ক্যাচাল লাগছে, তাই দূরে আছি।’

মামলার বাদী রাকিবের মা রীতা অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁর চোখের নিচে আঘাত করে। ছবি: আসাদুজ্জামান
মামলার বাদী রাকিবের মা রীতা অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁর চোখের নিচে আঘাত করে। ছবি: আসাদুজ্জামান

পুলিশের সঙ্গে রাকিবের মায়ের কথোপকথন
রাকিব হাওলাদারকে থানায় ধরে এনেছিলেন ওয়ারী থানার এএসআই জ্যোতিষ চন্দ্র রায়। থানায় রাকিবের মা একাধিকবার তাঁর কাছে ধরনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জ্যোতিষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলব না। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’

তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলামের কক্ষে রাকিবকে মারধর করতে দেখেছেন মা রীতা হাওলাদার। কিন্তু ওসি প্রথম আলোকে বলেন, রাকিব নামের কাউকে তাঁরা ধরেননি। রাকিবের মায়ের থানায় আসার তথ্য পুরোপুরি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

তবে রাকিবের কথিত ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনার পর করা মামলার বাদী এসআই শাহ আলম সেদিন রাকিবের খোঁজে তার মা রীতা হাওলাদারের থানায় যাওয়ার কথা স্বীকার করেন।

এসআই শাহ আলম রাকিবের পরিবারের দীর্ঘদিনের পরিচিত। রাকিবের মা রীতা হাওলাদার তাঁকে কাকা ডাকেন। পরিচিত এএসআই জ্যোতিষও। সাবেক ওসি রফিকুল ইসলামও প্রথম আলোকে বলেছেন, রাকিবের বাবা-মা এবং নানাকে (আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ মৃধা) এসআই শাহ আলম অনেক দিন থেকে চেনেন। অথচ পুলিশ ‘ক্রসফায়ারের’ পরে মামলায় রাকিবকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে দেখায়।

এই মামলার পর রাকিবের মা রীতা হাওলাদার এসআই শাহ আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলেন। তাতে দেখা যায়, এসআই শাহ আলম রীতাকে বলছেন, ‘তোমাকে সেদিন থানায় দেখছি, আমি অস্বীকার করছি না। তুমি ছেলেকে খুঁজতেছ। তুমি দেখছ না, আমি সেদিন কী কাজে যেন ব্যস্ত ছিলাম।’

রাকিবের মা বলছেন, ‘আমি কাকা আপনাকে থানায় বলেছিলাম, আমার ছেলেকে ওরা মারতেছে। কিন্তু আপনি গুরুত্ব দিলেন না। কম্পিউটার রুমে চলে গেলেন।’ শাহ আলম বলেন, ‘শোনো, আমার ঊর্ধ্বতন অফিসার যদি কোনো কাজ করেন, তখন ওই ব্যাপারে আমি না, কারও নাক গলানোর অধিকার নাই।’

রীতা হাওলাদার বলেন, ‘...আর মরা মানুষটারে কেমনে ক্রসফায়ার করে, কন? আমার কি কোনো শত্রু আছে কাকা?’ শাহ আলম বলেন, ‘তুমি এখন যে প্রশ্ন করো, বাবা রে, তোমার সঙ্গে কথা বললে আমাগো পাপ হয়ে যাবে।’

>রীতা হাওলাদার বলতে থাকেন, ‘মরা মানুষরে কেউ ক্রসফায়ার দেয়। আমার বাচ্চার বয়স মাত্র ১৫ বছর। আল্লাহ এ খুনের বিচার করবে।’
 

শাহ আলম তখন বলেন, ‘হ, তুমি আল্লার কাছেই কও। যে লোকে তোমার ছেলেকে মারছে, তারও ছেলেমেয়ে আছে। তার ছেলেমেয়েরও যেন এমন হয়। তুমি না কইলেও মার্ডার কেস কোনো দিন চাপা থাকে না। এই যে নারায়ণগঞ্জে সাতটা লোক খুন হলো। কীভাবে বস্তামস্তা বান্দে লাশ ডুবাই দিছিল। লাশ কিন্তু ভেসে উঠছে।’

আরও একবার এসআই শাহ আলমকে ফোন করেছেন রীতা হাওলাদার। রীতা বলছেন, ‘কাকা, জ্যোতিষকে (এএসআই) আমার ছেলের মোবাইল ফোনটা দিতে কন। স্মৃতিটা রাখি। টাচ মোবাইলটা। সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছি। ওটার ভেতর পোলার ছবি আছে।’ শাহ আলম বলেন, ‘রাকিবরে কে ধরে আনছিল; জ্যোতিষ? আচ্ছা, আমি জ্যোতিষের সঙ্গে কথা বলব।’

ছেলের মোবাইল ফোন ফিরে পেতে পরিচিত এসআই শাহ আলমকে আরেক দিন ফোন করেন রীতা হাওলাদার। শাহ আলম বলেন, ‘জ্যোতিষের সঙ্গে দেখা হয়নি। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করে লই। আর যদি না হয়, তাহলে আমি একটা মোবাইল কিনে দিব।’ রীতা হাওলাদার বলেন, ‘কাকা, ওটা আমার পোলার স্মৃতি!’

আরেক কথোপকথনে শাহ আলম রীতা হাওলাদারকে বলছেন, ‘আমার চোখের পানি কয়বার মুছছি, দেখছ। আমার বিশ্বাস হয় না রীতার পোলা মারা গেছে। আমার এখনো সত্যি বিশ্বাস হয় না। আমি তো লতিফ ভাইকে (রাকিবের নানা) কইছি, আপনার নাতি তো ছোট মানুষ। অনেকবার বাসায় গেছি। ও তো আমারে নানা ডাকে।’

তালহা থেকে শুরু
২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খন্দকার আবু তালহা ওয়ারীর গোপীবাগে ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন। নয় দিন পর তালহাকে খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন আবদুর রহমান ওরফে মিলন ও বেলাল হোসেন ওরফে সবুজ নামের দুজন। তাঁরা আদালতে বলেছেন, তালহা খুনে তাঁদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ‘টোকাই রাকিব’ নামের একজন। তবে তার বিস্তারিত পরিচয়, ঠিকানা জবানবন্দিতে নেই।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, তালহা খুনের দুদিন পর ওয়ারী থানায় ২০০ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে একটি মামলা হয়। সেখানে এক আসামির নাম ছিল মো. রাকিব। ওই মামলায় পুলিশ রীতা হাওলাদারের ছেলে রাকিব হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে এবং প্রায় তিন মাস সে কারাগারে থাকে। কিন্তু তালহা হত্যার নয় দিন পর গ্রেপ্তার দুজনের জবানবন্দিতে আসা ‘টোকাই রাকিব’, তালহা হত্যার দুদিন পর এক ব্যক্তির করা ছিনতাই মামলার আসামি ‘মো. রাকিব’ আর কথিত ক্রসফায়ারে নিহত ‘ছোট রাকিব’ কি একই জন?

তালহা খুনের মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ওয়ারী থানার এসআই হারুন-অর-রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জবানবন্দিতে রাকিবের পুরো ঠিকানা বলেনি তারা। ওয়ারী এলাকায় তো অনেক রাকিব আছে।’

পুলিশ বলছে, ডাকাতদের গুলিতে রাকিব ওয়ারীর টয়েনবি সার্কুলার রোডের এই দোকানের সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান
পুলিশ বলছে, ডাকাতদের গুলিতে রাকিব ওয়ারীর টয়েনবি সার্কুলার রোডের এই দোকানের সামনেই গুলিবিদ্ধ হয়। ছবি: আসাদুজ্জামান

৩৫ নম্বর বনগ্রাম লেন, ওয়ারীর বাসিন্দা মহসিন হাওলাদার ও রীতা হাওলাদারের ছেলের নাম রাকিব হাওলাদার। ছিনতাইয়ের মামলায় নাম মো. রাকিব হলেও আটক হয়ে জেল খেটেছে কিশোর রাকিব হাওলাদার। ওই ছিনতাই মামলার বাদীর নাম ওমর ফারুক। তিনি ২৪ নম্বর ফোল্ডার স্ট্রিটের সিটি টেলিকমের কর্মচারী ছিলেন। তিনি এখন আর সেখানে কাজ করেন না। এজাহারে থাকা ফোন নম্বরটি এই অফিসের ছিল।

এই রাকিবই যে তালহা খুনে জড়িত, তা কি পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে? জানতে চাইলে ওয়ারী থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হ্যাঁ, এই রাকিবই।’ তাহলে যখন ছিনতাই মামলায় রাকিব হাওলাদার আটক ছিল, তখন তাকে তালহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখাননি কেন? জবাবে ওসি বলেন, ‘এই রাকিব তো তখন আমার মাধ্যমেই জেলে গেছে। সে-ই যে তালহাকে মেরেছে, তা তো তখন আমি জানতাম না। ১৬ দিন পর (আসলে ৯ দিন পর) যখন তালহা খুনে জড়িত সবুজ ও মিলন ধরা খায়, তখন জানতে পারি রাকিবের নাম।’ এরপর ছয় মাস পার হয়ে গেল, রাকিব হাওলাদার জামিন পেয়ে চায়ের দোকান চালাচ্ছে, বাসা থাকছে, এত দিন তাকে তালহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়নি কেন? জবাবে ওসি বলেন, ‘এখানে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। রাকিবকে তালহা খুনের মামলায় কীভাবে গ্রেপ্তার দেখাব? রাকিবের কি শেষ আছে? এক ছিনতাইকারী আরেক ছিনতাইকারীকে চেনে না। একজনের ফোন নম্বর আরেকজন জানে না। কেবল চেহারার বর্ণনা দিতে পারে।’ আবার রফিকুল ইসলাম এ-ও বলেন, তালহা খুনে জড়িত থাকার পাশাপাশি এই ‘ছোট’ রাকিব মুক্তার নামের আরেকজন খুনেও জড়িত ছিল। ২ এপ্রিল জয়কালী মন্দির এলাকায় ছিনতাইয়ের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে মুক্তার খুন হয়। এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি জিসান ও শামীম আদালতে বলেছেন, মুক্তারের গলায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে এই রাকিব। ওয়ারী জোনের ডিসি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, তালহাকে খুন করেছিল রাকিব। সে ছিনতাইকারী।

তালহা খুনের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহ আলম। তিনি ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত রাকিব খুনের মামলারও বাদী। আবার তিনি ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনায় ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে করা মামলাও বাদীও তিনি। সেই মামলায়ও ক্রসফায়ারে নিহত রাকিব আসামি। এই শাহ আলমকেই রাকিব নানা ও রাকিবের মা কাকা বলে ডাকেন।

তালহা হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে শাহ আলম বলেন, ‘এখনো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাইনি। পেলে অভিযোগপত্র দেব।’ দুজন তো ধরা পড়েছে আর কে আছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে “ছোট” রাকিবও ছিল।’ এই রাকিব কি গ্রেপ্তার হয়েছেন? শাহ আলম বলেন, ‘রাকিবকে তো অ্যারেস্ট করা যায়নি। পরবর্তীকালে জানতে পেরেছি, বঙ্গভবন রোডে ক্রসফায়ারে মারা গেছে। এই রাকিবই ১০০ ভাগ তালহা খুনে জড়িত ছিল।’ কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে সে-ই তালহা হত্যায় জড়িত ছিল? জবাবে শাহ আলম বলেন, ‘মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তা হারুন–অর–রশিদ গুলিবিদ্ধ ওই ডাকাতকে দেখে বলে ওঠেন, এই রাকিবকেই তিনি খুঁজছিলেন।’ আপনি এই রাকিবকে চিনতেন? শাহ আলম বলেন, ‘রাকিবের বাবা-মাকে চিনি। জয়কালী মন্দিরের ওখানে রাকিবদের দোকান ছিল। সেখানে তার বাবা-মাকে দেখেছি। কিন্তু রাকিবকে বাস্তবে দেখেননি।’ তার বয়স কত হবে? শাহ আলম বললেন, ‘১৯-২০ বছর হবে।’ কিন্তু তিনি মামলায় রাকিবের বয়স দেখিয়েছেন ২২ বছর। রাকিবের মৃত্যুর পর রাকিবের মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে শাহ আলম বলেন, ‘না।’

আইনজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরা যা বলছেন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও আইনজীবী সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার হওয়া উচিত। এই যে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে, এটাও আমাদের বিবেচনায় আনা উচিত কোন পরিস্থিতিতে আমরা বাস করি।’

চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিশু রাকিবের মৃত্যুর ঘটনাটা লোমহর্ষক। আইন অনুযায়ী রাকিবের মায়ের বিচার পাওয়ার অধিকার রাখেন। পুলিশ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভয়ভীতি দেখানোর পরিপ্রেক্ষিতে যদি মামলা প্রত্যাহার হয়ে থাকে, তাহলে রাষ্ট্রের এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব ছিল বিষয়টি তদন্ত করার। বাদীর মামলার প্রত্যাহারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত অসম্পূর্ণ রাখা উচিত নয়। ভুক্তভোগী যে মামলা করেছেন, তা পুনরুজ্জীবিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একজন শিশুকে মেরে ফেলার মতো এমন গুরুতর অভিযোগের মামলা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ আইনে নেই।’