কারলাইল দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে চাইছেন: পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র

লর্ড কারলাইল। ছবি: বিবিসি
লর্ড কারলাইল। ছবি: বিবিসি

যুক্তরাজ্যে লর্ড সভার সদস্য এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আইনজীবী আলেক্স কারলাইল ভারত ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ‘বিভেদ সৃষ্টির’ উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতে আসতে চেয়েছিলেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার আজ বৃহস্পতিবার সরাসরি এ অভিযোগ করেছেন। সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, কারলাইল দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে চাইছেন—এমন মনে করার যথেষ্ট সংগত কারণ রয়েছে। সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য গোপন রেখে তাই তিনি ভারতে আসতে চেয়েছিলেন। সে কারণেই তাঁর ভিসা বাতিল করা হয় এবং তাঁকে বুধবার রাতে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

বুধবার রাতে ভারতে নেমেও পরের বিমানে লন্ডন ফিরে গিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন করে কারলাইল পাল্টা জানান, ভারতের লজ্জিত হওয়া উচিত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক চাপের মুখে যেভাবে তারা নতিস্বীকার করল, ৭০ বছর বয়সী এক সাংসদের সঙ্গে যে আচরণ করল, তার কৈফিয়ত দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর যাবতীয় শ্রদ্ধা শেষ হয়ে গেছে। কারলাইল জানান, তাঁকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটল, তা নিয়েও তিনি শিগগিরই লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী আলেক্স কারলাইলকে নিয়ে কয়েক দিন ধরেই ভারত ও বাংলাদেশের রাজনীতি সরগরম। বাংলাদেশ তাঁকে সে দেশে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না বলে ভারতে এসে তিনি ওই দেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনীতির ‘অবস্থা ব্যাখ্যার’ উদ্যোগ নেন। লন্ডন থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানাচ্ছিলেন, খালেদা জিয়াকে কীভাবে ‘সাজানো মামলায়’ ফাঁসানো হচ্ছে এবং রাজনৈতিক কারণে হেনস্তা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ বলেই তিনি ভারতে এসে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার কথাও তিনি জানিয়েছিলেন।

আলেক্স কারলাইল যাতে ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধাচরণ করতে না পারেন, সে জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশ যেমন ভারতবিরোধী প্রচারের জন্য তার জমি ব্যবহার হতে দেয় না, ভারতেরও তেমন করা উচিত। তা ছাড়া সার্ক সনদের দৃষ্টান্ত দেখিয়েও বাংলাদেশ চাপ সৃষ্টি করে। এরপর ভারতও নড়েচড়ে বসে। সরকারিভাবে বৃহস্পতিবার বলা হয়, কারলাইলের ভিসা যে বাতিল করা হয়েছে, তা তাঁকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু তা সত্ত্বেও বুধবার রাতে কারলাইল ভারতে আসেন। এর আগে দিল্লির ‘ফরেন করেসপন্ডেটস ক্লাব’ (এফসিসি) তাঁকে সময় দিয়েছিল। বাংলাদেশের আপত্তি ও ভারতের চাপে (এফসিসি) তা বাতিল করে দেয়। কার্লাইল তখন ঠিক করেন, রাজধানীর এক পাঁচতারা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করবেন। কিন্তু গত রাতে দিল্লি নামার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। লন্ডনে ফিরে ভিডিও কনফারেন্স মারফত তিনি বলেন, দিল্লি নামার পর দেখি মোবাইলে ভিসা বাতিলের বার্তা। অভিবাসন দপ্তর জানাল, আমাকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অভিবাসনকর্মীরা খুবই ভদ্র ও আন্তরিক। আচরণও চমৎকার। কিন্তু তাঁদের কাছেও ভিসা বাতিলের কোনো জবাব ছিল না।

কারলাইলের এ অভিযোগের জবাব প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দেন রবীশ কুমার। তিনি বলেন, এ ধরনের কাজের জন্য যে ধরনের ভিসা নেওয়ার প্রয়োজন, কারলাইল তা নেননি। তিনি ‘বিজনেস ভিসা’ নিয়ে এখানে এসে যা করতে চাইছিলেন, তা আর যাই হোক, ব্যবসাসংক্রান্ত নয়। কারলাইলের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি প্রচার করা হয়, তা দেখিয়ে মুখপাত্র বলেন, এই কাজের জন্য তাঁকে ভিসা দেওয়া হয়নি। ভিসা বাতিলের খবরও তাঁকে আগেভাগে জানানো হয়েছিল। রবীশ কুমার বলেন, তিনি নিজেও জানতেন যে তাঁকে এ জন্য ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাই ফেরার টিকিট সঙ্গে করেই তিনি দিল্লি নেমেছিলেন।

বস্তুত, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে কারলাইল দিল্লি নামেন বুধবার রাত ১১টা নাগাদ। লন্ডনগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানে ওঠেন রাত একটা পঞ্চাশে! সংবাদ সম্মেলনে কারলাইল বলেন, সাহায্যের জন্য দিল্লি নেমে ব্রিটেনের ডেপুটি হাইকমিশনারকে তিনি ফোন করেছিলেন। কিন্তু ডেপুটি হাইকমিশনার নাকি তাঁকে বলেন, তিনি অসহায়। ভারতের সিদ্ধান্ত নড়চড় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

রবীশ কুমার বলেন, কারলাইলের উদ্দেশ্যই ছিল ভিন্ন। তিনি চাইছিলেন ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে চিড় ধরাতে। ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করাতে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিরোধী দলের সঙ্গে ভারতীয় নেতৃত্বের। রবীশ জানান, যখনই ভারতীয় নেতারা বাংলাদেশ সফর করেছেন, তা তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোন কিংবা প্রধানমন্ত্রী—সব সময় বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আলোচনা করেছেন। কারলাইল সেই সম্পর্ক নষ্টের চেষ্টায় ছিলেন। মুখপাত্র বলেন, পড়াশোনার ভিসা নিয়ে কেউ যেমন চাকরি করতে পারেন না, তেমনই বিজনেস ভিসা নিয়ে রাজনৈতিক প্রচার করা যায় না। দিল্লি এসে যা তিনি করতে চাইছিলেন, লন্ডনে বসেও তা করতে পারতেন। রবীশ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, দেশের আইন মানতে সবাই বাধ্য।