পানামা পেপারসে ব্যবসায়ীর নাম, দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

বিশ্বজুড়ে আলোচিত পানামা পেপারসে নাম আসায় ইউনাইটেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মাল্টি ট্রেড মার্কেটিং লিমিটেডের পরিচালক হাসান মাহমুদ রাজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। উপপরিচালক আখতার হামিদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল তাঁকে আজ সোমবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

দুদক সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, আজ দিনের বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানটির তিন পরিচালক খন্দকার মঈনুল আহসান, আহমেদ ইসমাইল হোসেন ও আকতার মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা।

পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসায় এর আগে ৮ জুলাই এ চারজনসহ সাত ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে নোটিশ পাঠায় দুদক।

এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এর আগেও এ বিষয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে অন্তত ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে দুদক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

পানামা পেপারসে নাম আসায় যে চার ব্যবসায়ীকে আজ ১৬ জুলাই দুদকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন ইউনাইটেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মাল্টি ট্রেড মার্কেটিং লিমিটেডের পরিচালক হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মঈনুল আহসান, আহমেদ ইসমাইল হোসেন ও আকতার মাহমুদ।

প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা যে তিনজনকে ১৭ জুলাই হাজির হতে বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন উইং লিমিটেডের পরিচালক এরিক জনসন আনড্রেস উইলসন, ইন্ট্রিডিপ গ্রুপের ফারহান ইয়াকুবুর রহমান ও ফেলকন শিপিংয়ের মাহতাবা রহমান।

২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল মোসাক ফনসেকা নামে পানামার একটি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি ফাঁস হয়। এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। নথিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নিকটাত্মীয়দের নাম আসে। এ তালিকায় আরও আছে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহমান আল সৌদ, মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের এক ছেলে এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দুই ছেলে ও এক মেয়ের নাম।

রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের পাশাপাশি ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি, ভারতের চলচ্চিত্রজগতের খ্যাতিমান অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ও তাঁর পুত্রবধূ অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাইয়ের নামও পাওয়া গেছে ওই নথিতে।

মোসাক ফনসেকার ওই ১ কোটি ১৫ লাখ নথি অজানা সূত্র থেকে জার্মান দৈনিক জিটডয়েচ সাইতংয়ের হাতে আসে। পত্রিকাটি সেসব নথি ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) দেয়। ১৯৭৭ থেকে ২০১৫, প্রায় ৪০ বছরের এসব নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার কিছু অংশ আইসিআইজে প্রকাশ করে।

ওই কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেন আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিগমন্ডুর ডেভিড গুনলাগসন।

সূত্র জানায়, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারসংক্রান্ত সাড়া জাগানো পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে এ পর্যন্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ ৩৪ বাংলাদেশি ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নামও উঠে এসেছে।

পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে কোনো কোনো গণমাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের নাম আসার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল দুদকের উপপরিচালক আখতার হামিদ ভুঁইয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। দলের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান ও উপসহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাত।

২০১৭ সালের নভেম্বরে প্যারাডাইস পেপারসের প্রায় ২৫ হাজার নথি প্রকাশ করা হয়। সেখানে ফাঁস হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক ব্যক্তির গোপন তথ্য। ১২০ জন রাজনৈতিক নেতা এ তালিকায় রয়েছেন। এবার ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মতো ব্যক্তির নাম রয়েছে। সেখানে যেখানে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ও একটি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে।

প্যারাডাইস পেপারসের বেশির ভাগ তথ্যই বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদদের, যাঁরা কর থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে (কর দিতে হয় না কিংবা খুবই নিম্ন হারে কর দেওয়া যায় এমন দেশ) বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাই এই কেলেঙ্কারির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্যারাডাইস পেপারস’। এতে গোপনে বিপুল পরিমাণ অর্থ করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশ ও অঞ্চলের অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা জড়িত।