সিলেটে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি আশাবাদ

গোলটেবিল বৈঠকে আরিফুল ও কামরান
গোলটেবিল বৈঠকে আরিফুল ও কামরান
>
  • সিলেটে প্রথম আলোর গোলটেবিল
  • খুলনা-গাজীপুরের ভোট আস্থার সংকট তৈরি করেছে
  • আস্থা ফিরিয়ে আনা কমিশনের দায়িত্ব

সিলেটে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা-ভয় যেমন আছে তেমনি আছে আশাবাদও। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে এসেছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচন। বিরোধী দলের প্রার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কণ্ঠে উৎকণ্ঠার মাত্রাটাই বেশি। তবে সরকারি দলের প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী।
গতকাল মঙ্গলবার সিলেটের একটি রেস্তোরাঁয় প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এই চিত্র উঠে এসেছে। ‘সিলেট সিটি করপোরেশন: কেমন নির্বাচন চাই’ শীর্ষক এই আলোচনায় সাত মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ছয়জন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ এবং নাগরিক সমাজের ছয় প্রতিনিধি ও দুজন নতুন ভোটার আলোচনায় অংশ নেন।
খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিরোধী দলের প্রার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, এখন ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, একটা ভয় ও শঙ্কা কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হবে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা।

তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি নির্বাচন করে আসছেন। এখানে যত নির্বাচন হয়েছে, সবই সুষ্ঠু হয়েছে। গত সিটি নির্বাচনে তিনি কাঙ্ক্ষিত ফল পাননি। তবু ফল মেনে নিয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস, এবারও উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট হবে এবং সব ভোটার স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন।

বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘যেসব লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি তাতে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে মনে হচ্ছে না। পুলিশ ফোন করে কিছু বাসায় রাতের বেলা যাচ্ছে। আর আমার সম্ভাব্য এজেন্টদের হুমকি দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের পোলিং এজেন্ট ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের তালিকা ধরে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে অনেক অভিযোগ দিয়েছেন, কাজ হয়নি। সবার জন্য সমান সুযোগও নিশ্চিত হয়নি।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচনে ভয়ের সংস্কৃতি আছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন সব জায়গায় একক ব্যক্তির কর্তৃত্ব। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারে বর্তমানে দলীয় নির্বাচন হচ্ছে বলা হলেও, এটা আসলে আধা দলীয়।
সিপিবি-বাসদ মনোনীত প্রার্থী মো. আবু জাফর অভিযোগ করে বলেন, একটা সময় সিলেট সবুজ নগরী ছিল। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে বৃক্ষকে কেটে ফেলা হয়েছে।
বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, তিনি ৫০ হাজার পোস্টার লাগিয়েছিলেন। এখন একটাও নেই, ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তবে সরকারি দলের প্রার্থীরটা ঠিকই আছে।
জামায়াতের সিলেট নগর আমির ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, যে দেশের জাতীয় সংসদের ১৫৩ আসন বিনা ভোটে নির্বাচিত, সেখানে ভালো কিছু আশা করা যায় না।
স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বিগত সিটি নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা চাই, নির্বাচন কমিশন বিশ্বকাপ ফুটবলের রেফারির মতো ভূমিকা পালন করুক। কিন্তু আমরা সেভাবে আশাবাদী হতে পারছি না।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী আশা প্রকাশ করেন, যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি সংগঠনের হলেও যেন দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করেন।
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সৈয়দা শিরিন আক্তার বলেন, প্রশাসনকে কোনো রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ না হয়ে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হতে হবে। ভোটারদের নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার, বিরোধী দলের এজেন্টদের কেন্দ্রে থাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
কবি ও শিশুসাহিত্যিক তুষার কর বলেন, ‘আমরা ক্ষমতার মোহ কিংবা বিত্তবৈভবের মোহ দেখি। গভীর অন্ধকার দেখি। আশার দীপাবলি দেখি না। আমরা যেন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের সঙ্গে আপস না করি।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় যে নির্বাচনগুলো হচ্ছে, আমরা চাই এ ধরনের নির্বাচন করে যেন সিলেটবাসীকে লজ্জিত হতে না হয়।’
নতুন ভোটারদের প্রতিনিধি হিসেবে চিকিৎসক তায়েফ আহমদ চৌধুরী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিসা কবির জীবনের প্রথম ভোট যেন নির্বিঘ্নে দিতে পারেন, সেই প্রত্যাশা করে বক্তব্য দেন।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসানের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন উপসম্পাদক লাজ্জাত এনাব মহছি। শুরুতে আলোচকদের পরিচয় করিয়ে দেন সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল মেহেদী।