শ্রীমঙ্গলে ধরা পড়ল দুর্লভ 'বিচিত্ররঙা উড়ন্ত কাঠবিড়ালি'

দুর্লভ ‘বিচিত্ররঙা উড়ন্ত কাঠবিড়ালি’। ছবি: শিমুল তরফদার
দুর্লভ ‘বিচিত্ররঙা উড়ন্ত কাঠবিড়ালি’। ছবি: শিমুল তরফদার

কাঠবিড়ালির সঙ্গে আমাদের পরিচয় থাকলেও অনেকেই উড়ন্ত কাঠবিড়ালি চেনেন না। দুর্লভ এই প্রাণী সাধারণত গহিন বনে লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে। তবে অসুস্থ অবস্থায় এমন একটি কাঠবিড়ালি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাণীটিকে সুস্থ করে তুলতে আজ বুধবার সকালে সেটিকে শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

১৪ জুলাই প্রাণীটিকে চা-বাগানে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন আলোকচিত্রী কাজল হাজরা।

কাজল হাজরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেশায় আলোকচিত্রী হওয়ার কারণে প্রায়ই ক্যামেরা নিয়ে বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াই। ১৪ জুলাই ছবি তুলতে গিয়ে রাস্তার পাশের চা-বাগানে এই কাঠবিড়ালির বাচ্চাটিকে দেখতে পাই। স্পর্শ করে বুঝতে পারি—এটা খুবই অসুস্থ। সেখান থেকে কাঠবিড়ালিটিকে বাড়িতে এনে গরুর দুধ, পানি, ফল খাইয়ে কয়েক দিন রেখে কিছুটা সুস্থ করে তুলি। আজ সকালে এটিকে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের কাছে দিয়ে আসি।’

বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সঞ্জিত দেব প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রাণীর নাম ‘বিচিত্ররঙা উড়ন্ত কাঠবিড়ালি’। এটি বাচ্চা কাঠবিড়ালি। এখনো বেশ অসুস্থ। প্রাণীটিকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুস্থ হলে এটিকে আবাসস্থলে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

সঞ্জিত দেব জানান, বিচিত্ররঙা উড়ন্ত কাঠবিড়ালিকে কেউ কেউ ‘উড়ুক্কু কাঠবিড়ালি’ বলে থাকেন। এটি দুর্লভ প্রাণী। এর ইংরেজি নাম ‘পার্টিকালারড ফ্লাইং স্কুইরেল’ এবং ‘বৈজ্ঞানিক নাম হাইলোপেটেস অ্যালবোনিগার’। উড়ন্ত কাঠবিড়ালি মাথাসহ দেহের দৈর্ঘ্য ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার এবং লেজ ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। কান তুলনামূলকভাবে বড়, চ্যাপ্টা লেজ, দেহের পার্শ্বে কালচে-বাদামি এবং নিচের অংশ সাদা। লেজ ধূসর থেকে ধূসর বাদামি, লেজের গোড়া ফ্যাকাশে, আগা গাঢ় রঙের। পা গাঢ় বাদামি।

সঞ্জিত দেব জানান, উড়ন্ত কাঠবিড়ালি নিশাচর ও বৃক্ষবাসী প্রাণী। মাটিতে তেমন নামে না। গাছ থেকে গাছে উড়ে বেড়ায়। গাছের শিকড়, কুঁড়ি, পাতা ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে। সিলেট ও চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে এদের দেখা যায়।

সঞ্জিত দেব বলেন, বিচিত্ররঙা উড়ন্ত কাঠবিড়ালি এক গাছ থেকে অন্য গাছে ১৫০ থেকে ২০০ ফুট দূরত্বে লাফাতে পারে। ওড়ার সময় লেজটাকে এরা লাগাম হিসেবে ব্যবহার করে। সাধারণভাবে এদের আয়ুষ্কাল ১০ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত হলেও বিপন্ন বন্য পরিবেশ ও খাদ্যসংকটের কারণে এদের গড় আয়ু এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।