মানহীন ৯৩ লাখ জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল

নির্বাচন কমিশন ভবন
নির্বাচন কমিশন ভবন

কাগজে প্রিন্ট করা মানহীন ৯৩ লাখ জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান নিজেদের এ সিদ্ধান্তের কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস বিডিকে জানিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ইসি নতুন করে কার্ড ছেপে দেওয়ার জন্য একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় চুক্তি করেছে। এর আগে দরপত্রে সবচেয়ে বেশি দাম হাঁকিয়ে (প্রায় ৯ কোটি টাকা) প্রতিষ্ঠানটি কাজ পেয়েছিল। বিনিময়ে নিম্নমানের কার্ড গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ভুল করেছে। তারা মানহীন কার্ড তৈরি করেছে। সে জন্য ইসি প্রতিষ্ঠানটির জামানতের টাকার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জরিমানা হিসেবে কেটে নেওয়ার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি তারা যাতে পুষিয়ে নিতে পারে, সে জন্য দ্বিতীয় দফায়ও তাদের কাজ দেওয়া হয়েছে।

ইসির সিদ্ধান্ত ছিল, ২০১২ সালের পরে ভোটার হওয়া ৯৩ লাখ ভোটারকে স্মার্টকার্ডের পরিবর্তে আপাতত কাগজে প্রিন্ট ও ল্যামিনেট করা জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এ জন্য তারা স্মার্ট টেকনোলজিসকে দায়িত্ব দেয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কার্ড ছাপার কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে কার্ড ছাপার কাজ শেষ করতে পারেনি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসে কাজ শেষ হলেও ইসি তদন্ত করে জানতে পারে, ছাপা হওয়া কার্ড অত্যন্ত নিম্নমানের।

জানা যায়, মূলত স্মার্ট টেকনোলজিসের নাম ব্যবহার করে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা কার্ড ছাপার কাজ করেছেন। এসব কার্ড যথাযথ প্রিন্টারে না ছেপে আগারগাঁওয়ের বিভিন্ন গলিতে স্থাপিত কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে ছাপা হয়েছে।

এ বিষয়ে গত ১৯ জুন প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে ছাপা এনআইডি নিম্নমানের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর ইসি মানহীন কার্ড গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্মার্ট টেকনোলজিসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ১৫ জুলাই স্মার্ট টেকনোলজিসের সঙ্গে ইসির নতুন করে চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা ৯৩ লাখ কার্ড নতুন করে ছেপে দেবে।
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ইসি ভবনের ১১ তলায় মেশিন বসিয়ে এবং ইসির তত্ত্বাবধানে কার্ড ছাপার কাজ করা হবে।

ইসি সচিবালয় সূত্র আরও জানায়, ছাপা হওয়া মানহীন ৯৩ লাখ কার্ড ইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হবে। আরও জানা যায়, এবারের কাজে স্মার্ট টেকনোলজিসের ৬০ জন দক্ষ কর্মী ইসিতে নিয়মিত উপস্থিত থেকে কাজ তদারকি করবেন।

জানতে চাইলে স্মার্ট টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগেরবার আমরা ভুল করেছি। যে কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনামের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। এবার সেই ভুল শুধরে নিয়ে কাজ করা হবে এবং ইসির অনুমোদন না নিয়ে কোনো কার্ড সরবরাহ করা হবে না।’