উপস্থিত থাকেন না সেবা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সমন্বয় সভায় অধিকাংশ সেবা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন না। সভায় এমন কর্মকর্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয়, যাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার রাখেন না। অনেক সময় তাঁরা মতামত বা আলোচনায়ও অংশগ্রহণ করতে পারেন না। এতে সভাগুলো ফলপ্রসূ হয় না।

গত মে মাসে এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে এসব কথা জানিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তাঁর অভিযোগ, ডিএসসিসির আহ্বানে যতগুলো সমন্বয় সভা করা হয়েছে তার প্রতিটিতেই অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এতে সিটি করপোরেশন এলাকায় সব সেবা সংস্থাকে নিয়ে সমন্বয় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ সেবা সংস্থাগুলো সমন্বয় করে কাজ করতে সরকারের আদেশ রয়েছে।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর ৪৯(১৫) ধারা অনুযায়ী, ২৬টি সরকারি সেবা সংস্থার প্রধানদের সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের আমন্ত্রণে তাদের সভায় অংশগ্রহণ করবেন এবং বক্তব্য দেবেন। কিন্তু আইনে নির্দেশনা থাকলে সরকারের সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। পরে কাজের সুবিধার্থে এবং সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পরিপত্র জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এতে সব সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করার নির্দেশ দেওয়া হয় আবার।

পরিপত্রের পর ডিএসসিসির আহ্বানে তিনটি সমন্বয় সভা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বিষয়ভিত্তিক সভাও হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ সংস্থাই সমন্বয় সভাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিষয়টি অবহিত করে গত ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। চলতি মাসের শেষ দিকে পরবর্তী সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ডিএসসিসি এলাকায় ২৬টি সেবা প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), ঢাকা মহানগর পুলিশ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি, ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে বছরে এক রাস্তা তিনবার খুঁড়তে হয়েছে, এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে। সমন্বয় সভাগুলো হওয়ার পরও এই প্রবণতা তেমনটা কমছে না। সমন্বয় সভাগুলোয় সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানেরা উপস্থিত না থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

নগর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নাগরিক সেবা বাড়াতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভেঙে দুই ভাগ (উত্তর-দক্ষিণ) করেছে সরকার। এখন এর আয়তনও দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। সেবার মানও বাড়ছে না। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে ঢাকা শহরে জনজীবনে অচলাবস্থা নেমে আসবে।

নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি বাদে সব সংস্থার প্রধানেরা রাষ্ট্রের কর্মচারী ছাড়া আর কিছুই নন। আর জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত মেয়র হলেন জনপ্রতিনিধি। রাষ্ট্রের কর্মচারীরা তাঁর নির্দেশনা শুনতে ও মানতে বাধ্য। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আইনে তা-ই বলা আছে। যাঁরা সরকারি নির্দেশনা মানছেন না, বিষয়টি ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির মেয়রকে তা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। অন্যথায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল পাওয়া যাবে না।

ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সে জন্য সমন্বয় সভাগুলো আরও কার্যকর করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।’