মাদকবিরোধী প্রতিবেদন ও স্টিকার প্রতিযোগিতা পুরস্কার প্রদান

প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত এবং এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় মাদকবিরোধী সেরা প্রতিবেদন ও মাদকবিরোধী স্টিকার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। হোটেল সোনারগাঁও, মেঘনা হল। ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্ট আয়োজিত এবং এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় মাদকবিরোধী সেরা প্রতিবেদন ও মাদকবিরোধী স্টিকার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। হোটেল সোনারগাঁও, মেঘনা হল। ছবি: প্রথম আলো

মাদকের বিস্তারে অভিভাবক, চিকিৎসক সবাই উদ্বিগ্ন। মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবারকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাস্তায় বসিয়ে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাঘববোয়ালদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

আজ শনিবার প্রথম আলো ট্রাস্টের প্রথম আলো মাদকবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে আয়োজিত মাদকবিরোধী সেরা প্রতিবেদন ও স্টিকার প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আলোচকেরা এ কথা বলেন। রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রথম আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ ও অন্য অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, অ্যাসিড–সন্ত্রাস মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরিসহ সামাজিক আন্দোলনের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় প্রথম আলো ট্রাস্ট যাত্রা শুরু করে। এর আওতায় ১৫ বছর ধরে প্রথম আলো মাদকবিরোধী আন্দোলন কাজ করছে। বর্তমানে মাদকের বিরুদ্ধে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকারের এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে মাদকের ব্যাপকতা আরও বেড়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারের মাদকবিরোধী অভিযানে যাদের ধরা হচ্ছে, তারা শাস্তি পেলে মাদকের এ ভয়াল থাবা থেকে মুক্তি মিলবে।

মাদককে ‘না’ বলার আহ্বান জানিয়ে কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় প্রতি পরিবারেই মাদকের ভয়াল থাবা গ্রাস করেছে। কেউ তা প্রকাশ করে আবার কেউ তা গোপন করে। বিষয়টি গোপন না করলে উপদেশ, পরামর্শ দেওয়া যায়, চিকিৎসার আওতায় আনা যায় মাদকাসক্তকে। আর বিষয়টি গোপন করলে ধ্বংস হয়ে যায় পুরো পরিবার।

সেন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের অধ্যক্ষ এবং বারাকা মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক ব্রাদার রবি পিউরিফিকেশন বলেন, ‘মাদকের সঙ্গে মেধাবী শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সব সময় টেনশনে থাকি। অনেক দূর অগ্রসর হওয়ার পর পরিবার বিষয়টি জানতে পারছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবারকে রাস্তায় বসিয়ে দিচ্ছে। এমন একটা সময় আসবে, যখন মাদকাসক্ত তরুণেরা কর্মবিমুখ বা কর্মহীন হয়ে পড়বে।’

প্রথম আলোর মাদকবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই যুক্ত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি, প্রচার চালানো এবং মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্তদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রথম আলো যাতে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, সে আহ্বান জানান।

প্রথম আলোর মাদকবিরোধী আন্দোলনের উপদেষ্টা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহিত কামাল সব সময় এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার অঙ্গীকার করে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ঘরকে সচেতন করতে হবে যাতে করে নতুন কোনো সদস্য এতে আক্রান্ত না হয়।’

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ত্রপা মজুমদার বলেন, মাদকের মতো সংবেদনশীল বিষয়টি কীভাবে গ্রহণ করে, কোথায় পাওয়া যায় তার সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা বা প্রচার সাংবাদিকতার পরিপন্থী।

তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী কোনাল বলেন, একটি পরিবারে মাদক ঢুকলে পরিবারটিই ভেঙে যায়। মাদক না পরিবার, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা তরুণ প্রজন্মকে ভাবতে হবে। গান বাজনাসহ তরুণ প্রজন্ম বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে মাদক থেকে দূরে থাকা যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বক্তব্যে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, মাদকাসক্তি কোনো অসুখ না। পরিস্থিতির শিকার ও বিভ্রান্ত হয়ে একেকজন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন। পরিবার অভিশপ্ত পরিবারে পরিণত হচ্ছে।

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, মাদক থেকে মুক্ত থাকার সহজ উপায় হচ্ছে মাদক না নেওয়া। সুন্দর পৃথিবীতে ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্যও মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। আর মাদকের আমদানি রপ্তানির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ক্ষমা নেই, তাদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে। একই সঙ্গে মাদকের রুট বা উৎস বন্ধ করতে হবে।

যাঁরা পুরস্কার পেলেন: মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সেরা প্রতিবেদনের জন্য এবার নবমবারের মতো এবং স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের চতুর্থবারের মতো স্টিকার ডিজাইন প্রতিযোগিতার পুরস্কার দেওয়া হয়।

এবার সংবাদপত্র শাখায় দৈনিক আমাদের সময়ের নিজস্ব প্রতিবেদক হাবিব রহমান এবং টেলিভিশন শাখায় যমুনা টেলিভিশনের নিজস্ব প্রতিবেদক নাজমুল সাঈদ সেরা প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যেকই ৫০ হাজার টাকার চেক, সনদ এবং ক্রেস্ট পেয়েছেন। এতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ও ত্রপা মজুমদার।

স্টিকার প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে আইডিয়াল স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সরকার আমীর আবদুল্লাহ। সে ১৫ হাজার টাকার বই এবং ক্রেস্ট পেয়েছে। দ্বিতীয় পুরস্কার পাওয়া মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রাহাত বিন আনিকুল ১০ হাজার টাকার বই আর তৃতীয় পুরস্কার পাওয়া মণিপুর স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়া তাহসিন জেবা পেয়েছে পাঁচ হাজার টাকার বই ও ক্রেস্ট। এই তিন বিজয়ী এক বছর কিশোর আলো এবং ছয় মাসের বিজ্ঞানচিন্তা পাবে বিনা মূল্যে। এ প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নিউএজ পত্রিকার আর্টিস্ট ও কার্টুনিস্ট মেহেদী হক, ডেইলি স্টারের সাদাত উদ্দিন, প্রথম আলোর প্রধান আর্টিস্ট অশোক কর্মকার ও শিল্পী নিয়াজ চৌধুরী তুলি।