আনসারুল্লাহর জুবায়ের ঘটনাস্থলেই ছিলেন

জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী
জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী
>
  • ২০১৬ সালে ঢাকায় খুন হন জুলহাজ ও তনয়
  • দুজনেই সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছিলেন
  • হত্যার ঘটনায় জবানবন্দি আনসার আল ইসলামের জুবায়ের
  • পুলিশ বলছে, জুবায়ের অন্তত চারটি হত্যায় যুক্ত

রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী (তনয়) হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলেই ছিলেন জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কথিত গোয়েন্দা শাখার প্রধান জুবায়ের। গতকাল রোববার ঢাকার মহানগর হাকিমের আদালতে তিনি এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জুবায়ের (২৭) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অভিজিৎ রায় হত্যা, পুরান ঢাকায় নাজিমউদ্দীন সামাদসহ অন্তত চারটি হত্যায় যুক্ত ছিলেন। তিনি আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) নীতিনির্ধারণী শুরা কমিটির সদস্য। ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের একটি দল।

২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার কলাবাগানে খুন হওয়া জুলহাজ মান্নান যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। সর্বশেষ তিনি মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির কর্মসূচি কর্মকর্তা পদে কাজ করছিলেন। তাঁর বন্ধু মাহবুব রাব্বী নাট্যকর্মী। তাঁরা দুজনেই সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছিলেন।

এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া এবিটি সদস্যদের মধ্যে জুবায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জুবায়ের এবিটির গোয়েন্দা শাখার দায়িত্বে ছিলেন। সংগঠনে তিনি শেখ আবদুল্লাহ, জায়েদ, জাবেদ, আবু ওমায়ের নামেও পরিচিত। এ জঙ্গি সংগঠনটির তহবিলের দেখভালও করতেন তিনি। তাঁর হাত দিয়েই বিভিন্ন খাতে টাকা খরচ হতো। এবিটির সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ ও আলোচনা হতো। জুবায়েরের হাত দিয়ে অর্থ পেতেন জিয়াউলও। এবিটির মাধ্যমে হওয়া সব নাশকতা ও হত্যাকাণ্ডের তথ্য জুবায়েরের কাছে রয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন।

১৭ জুলাই গ্রেপ্তারের পর জুবায়েরকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গতকাল তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। আদালত সূত্র জানায়, ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবিব জুবায়েরের জবানবন্দি গ্রহণ করে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। জবানবন্দিতে জুবায়ের জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক খুনে যুক্ত থাকার বিষয়ে দায় স্বীকার করেছেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল, জুলহাজ-তনয় জোড়া খুনের ঘটনায় আনসার আল ইসলামের নয়জনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। খুনিদের ফেলে যাওয়া মুঠোফোনের কল তালিকার সূত্র ধরে তখনই পুলিশ জঙ্গি রাশেদ উদ্দিন ভূঞা ওরফে রায়হান ও শরিফুল ইসলাম ওরফে কেরামত নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। রাশেদ উদ্দিন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ জঙ্গির নাম বলেছেন। এ ছাড়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জিয়াউল হক ও সেলিমও এখনো গ্রেপ্তার হননি।

কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৩ সালে এবিটিতে যোগ দেওয়া জুবায়ের সংগঠনটির গোয়েন্দা শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জুবায়ের নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অভিজিৎ রায় হত্যার ঘটনাস্থল রেকি করেছিলেন। এ ছাড়া তিনি পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন সামাদ হত্যার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। জুলহাজ-তনয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থলেই ছিলেন তিনি। আজ এ বিষয়ে পুলিশ বিস্তারিত জানাবে।