হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় অপুষ্টি বেশি

লানসা ও ব্র্যাকের যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশের পুষ্টি উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা’ শীর্ষক সমাপনী সেমিনারের আলোচকেরা। ছবি: ব্র্যাক
লানসা ও ব্র্যাকের যৌথ আয়োজনে ‘বাংলাদেশের পুষ্টি উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা’ শীর্ষক সমাপনী সেমিনারের আলোচকেরা। ছবি: ব্র্যাক

দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যেখানে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ, সেখানে হাওরে এই হার ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ। হাওরে কম ওজনের শিশুর হার ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই হার ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ। আবার বন্যাপ্রবণ এলাকায় পরিবারপিছু আয় অন্য এলাকার পরিবারের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম। জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা ও স্বতন্ত্র ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় এ চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

‘বাংলাদেশের পুষ্টি উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা’ শীর্ষক সমাপনী সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আজ সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ল্যাভারেজিং এগ্রিকালচার ফর নিউট্রিশন ইন সাউথ এশিয়া (লানসা) ও ব্র্যাক যৌথভাবে এর আয়োজন করে। এতে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিল যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা ইউকেএইড।

আজকের প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা শাখার অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলে ওয়াহিদ খন্দকার। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশনের পরিচালক সমীর কান্তি সরকার, ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক আবদুল বায়েস প্রমুখ।

সেমিনারে সমীক্ষার বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলা হয়, গ্রামীণ জনপদে শস্য ও খাদ্যবৈচিত্র্য এবং পুষ্টিমানের বিষয়টি পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। দেখা যায়, খাদ্যবৈচিত্র্য ও পুষ্টিমানের দিকে লক্ষ রেখে উৎপাদন বাড়ালে কম ওজনের জনসংখ্যার হার কমতে থাকে।

অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি বক্তারা পুষ্টি নিশ্চিত করতে বৈচিত্র্যময় খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহী করে তোলার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

সেমিনারে ফজলে ওয়াহিদ খন্দকার বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই লক্ষ্য অর্জন ও সামগ্রিক উন্নয়নে প্রক্রিয়ায় আমাদের কৃষি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব, শ্রমিক দুষ্প্রাপ্যতা, বন্যা ও আকস্মিক বন্যা, শিলাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে বাংলাদেশের কৃষি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে।

সমীর কান্তি সরকার বলেন, অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যশিক্ষাও জরুরি। পুষ্টি নিশ্চিত করতে খাদ্যজ্ঞান থাকতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে আমরা আরও উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হব।

ইমরান মতিন বাংলাদেশের পুষ্টি উন্নয়নে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এগুলো হচ্ছে এ-সংক্রান্ত তথ্যপ্রাপ্তিকে আরও সহজতর করা, কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া এবং মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা।

বাংলাদেশে লানসার কার্যক্রম নিয়ে সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন এর পরামর্শক ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো বর্ণালী চক্রবর্তী। এ ছাড়া ‘কৃষি ও পুষ্টি: বাংলাদেশে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কার্যক্রম’ নিয়ে আরেকটি বিশ্লেষণ তুলে ধরেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ ললিতা ভট্টাচার্য। সেমিনারে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মসূচি নিয়ে আরও একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি প্রধান মাহফুজা রিফাত।

অনুষ্ঠানে দরিদ্রদের পুষ্টি নিশ্চিতকরণে বেশ কিছু করণীয় বিষয় তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে স্কুল পুষ্টি কর্মসূচি, দুধপানকে আরও উৎসাহিত করা এবং খাদ্য গুদামজাতকরণের দিকে অধিকতর মনোযোগী হওয়া। বক্তারা পুষ্টি উন্নয়নে দুর্গম এলাকা ও ভৌগোলিক অবস্থানভেদে এবং দরিদ্রদের জন্য বিশেষ ধরনের কর্মসূচি নেওয়ার সুপারিশ করেন।