ধামরাইয়ে দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ৫, রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে নিহত আরও ৬

বাসের আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। মগবাজার, ঢাকা, ৩ আগস্ট। ছবি: আবদুস সালাম
বাসের আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। মগবাজার, ঢাকা, ৩ আগস্ট। ছবি: আবদুস সালাম

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে পরবর্তী ২৩ ঘণ্টায় সড়কে প্রাণ গেল আরও ১১ জনের। এর মধ্যে ঢাকার ধামরাইয়ে শুক্রবার রাতে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন পাঁচজন। রাজধানীতে বাসচাপায় নিহত হয়েছেন একজন।

এ ছাড়া কুমিল্লায় মাইক্রোবাসের চাপায় নবম শ্রেণির এক ছাত্র ও টাঙ্গাইলে পিকআপের ধাক্কায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রী প্রাণ হারিয়েছে। এ ছাড়া আরও তিন জেলায় বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ নিহত হয়েছেন আরও তিনজন।

এ নিয়ে গত ৫২৬ দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪ হাজার ৭৪৭। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের কসমস এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফরিদপুরগামী সূর্যমুখী পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ধামরাইয়ের চণ্ডীপুর এলাকার ভজন সাহা (৫৫), দুর্ঘটনাকবলিত একটি বাসের চালকের সহকারী জহির মোল্লা (২২) ও আয়কর কর্মকর্তা সোমনাথ সেন। রাত ১১টা পর্যন্ত বাকি দুজনের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ।
ধামরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাঈদ আল মামুন বলেন, আরিচার দিক থেকে আসা বাসের বেপরোয়া গতি দুর্ঘটনার কারণ বলে জানা গেছে। বাসটি স্থানীয় বিভিন্ন কারখানার পোশাক শ্রমিক বহন করে থাকে। আহতদের উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজধানী ঢাকার মগবাজারে বাসের চাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে সাতক্ষীরা-ঢাকাগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় ওই ব্যক্তি নিহত হন। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসের চালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে এবং বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সর্দার। নিহত ব্যক্তির নাম সাইফুল ইসলাম ওরফে রানা। মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে চাকরি করেন। তাঁর বয়স আনুমানিক ২৩ বছর। এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। আটক বাস চালকের নাম ইমরান সর্দার।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগরে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে অজ্ঞাতনামা মাইক্রোবাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র আলিফ হাসান (১৪)। আলিফ দাউদকান্দির আঙ্গাউড়া গ্রামের মো. হুমায়ুন কবীরের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দুর্ঘটনার পর আলিফকে উদ্ধার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া রায়হান মিয়া বলেন, আলিফ মহাসড়কের পাশ দিয়ে হাঁটছিল। এ সময় পেছন থেকে মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতিতে এসে তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা মারুফ হাসান বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছানোর আগেই আলিফ মারা যায়।
পুলিশ স্বজনদের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আলিফের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।

চালকের সহকারী তানভীর (১৫) চালাচ্ছিল পিকআপটি। সখীপুর, ৩ জুলাই। ছবি: ইকবাল গফুর
চালকের সহকারী তানভীর (১৫) চালাচ্ছিল পিকআপটি। সখীপুর, ৩ জুলাই। ছবি: ইকবাল গফুর

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় পিকআপের ধাক্কায় নিহত হয় সাদিয়া আফরিন (১৫)। সে উপজেলার বেলতলী পশ্চিম পাড়ার আজহারুল হকের মেয়ে ও বড় চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সকাল নয়টার দিকে সাদিয়া ফুফুর বাড়ি থেকে হেঁটে নিজেদের বাড়ি ফিরছিল। পথে সখীপুর-সাগরদীঘি সড়কের বেলতলী বাজারে একটি পিকআপের ধাক্কায় তার মাথায় গুরুতর জখম হয়। স্থানীয় লোকজন সাদিয়াকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, পিকআপটি চালাচ্ছিল চালকের সহকারী এক কিশোর (১৫)। দুর্ঘটনার পরপরই তাকে আটক করে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেন স্থানীয় লোকজন। এদিকে সাদিয়া নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ও গাড়ির মালিককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বেলতলী এলাকায় চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন এলাকাবাসী।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহীন আলী বলেন, পিকআপের মূল চালক এবং মালিককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের গাবতলা এলাকায় গতকাল সকালে বাড়ির সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাপায় সানজিদ আহমেদ (৫) নামে এক শিশু নিহত হয়। সে ওই এলাকার তহুরুল ইসলামের ছেলে।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়নের ভূঁইয়াগাতী কামারপাড়া সেতু এলাকায় শুক্রবার সকালে ট্রাকের চাপায় বেলাল হোসেন (৩৮) নামে এক রিকশাভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। তিনি ঘুড়কা বাজার এলাকার মৃত আয়েচ মণ্ডলের ছেলে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ক্যামতলী বাজার এলাকায় মোটরসাইকেল ও ট্রলির মুখোমুখি সংঘর্ষে মো. রবিউল ইসলাম (২৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। উপজেলার নয়আনী শ্রীবরদী গ্রামের মিস্টার আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম মোটরসাইকেলটির চালক ছিলেন।