আলোকচিত্রী শহিদুলকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ

আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। সোমবার আদালতে নেওয়ার সময়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। সোমবার আদালতে নেওয়ার সময়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় রিমান্ডে থাকা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে শহিদুল আলমের স্বাস্থ্যগত অবস্থার বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের করা আন্দোলনের মধ্যে ‘উসকানিমূলক মিথ্যা’ বক্তব্য প্রচারের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় এই আলোকচিত্রী গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রিমান্ডে আছেন

শহিদুল আলমকে আটকের পর নির্যাতন ও রিমান্ডে পাঠানোর বৈধতা নিয়ে এবং চিকিৎসার জন্য তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশনা চেয়ে তাঁর স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ আজ রিটটি করেন। এতে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিআইজি (ডিবি) ও রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও সারা হোসেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও তানিম হোসেইন শাওন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

আদেশের পর আইনজীবী সারা হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্ট শহিদুল আলমকে অবিলম্বে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করব, সে সময় পর্যন্ত তাঁর রিমান্ড স্থগিত থাকবে।’

শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘উনাকে (শহিদুল আলম) নির্যাতন করা হয়েছে, উনি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তাঁর জবানিতে বলেছেন।’ এ সময় আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ‘আমি নিজে ও আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া উপস্থিত ছিলাম এবং আমি তাঁর শারীরিক অবস্থার প্রত্যক্ষদর্শী।’

ড. কামাল বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে কোনো অবস্থাতে কাউকে কোনো অজুহাতে নির্যাতন করা যাবে না। তবে ম্যাজিস্ট্রেট ওনার কোনো বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেননি। এমনকি স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় উনাকে রিমান্ডে দেওয়া হয়েছে। আশঙ্কা আছে আরও নির্যাতন করা হতে পারে।’

একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার বলেন, ‘তাঁর (শহিদুল আলম) বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগে মামলা হয়েছে। এজাহারে এসেছে, উনি সরকারের বিরোধিতা করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। ফেসবুক লাইভে গুজব ছড়িয়েছেন। যখন অরাজক পরিস্থিত চলছিল, তখন উনি ওই সব বক্তব্য দিচ্ছিলেন ও সরকারবিরোধিতাকে উসকে দিচ্ছিলেন।’

আদালত বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু তাকে নির্যাতন করার অধিকার কারও নেই।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসায় উনি বলেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিরোধিতা করবেন। তখন ড. কামাল হোসেন বলেন, বিরোধিতা করা অপরাধ নয়। সরকার গড নয়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে কারোই সরকারের সমালোচনা করার অধিকার আছে। পরে আদালত আদেশ দেন।

গতকাল সোমবার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় শহিদুল আলমকে সাত দিনের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মোহাম্মাদ আছাদুজ্জামান নূর রিমান্ডের ওই আদেশ দিয়েছিলেন।

এর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রোববার জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেইস বুক লাইভে আসেন তিনি। রোববার রাতে ধানমন্ডির বাসা থেকে আলোকচিত্রী শহিদুলকে তুলে নেয় ডিবি । নিরাপদ সড়কের দাবিতে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। শহিদুলের বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ওই মামলা করা হয়।