ঐতিহাসিক 'রোজ গার্ডেন' কিনে নিচ্ছে সরকার

পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ ভবন। ফাইল ছবি
পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ ভবন। ফাইল ছবি

৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ কিনে নিচ্ছে সরকার। নামে গার্ডেন বা বাগান হলেও এটি মূলত একটি বাড়ি। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই বাড়িতেই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়।

সচিবালয়ে গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-বিষয়ক প্রস্তাব অনুমোদন পায়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে গণখাতে ক্রয় বিধি অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সরকার ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় বাড়িটি কিনে নিচ্ছে। এর অবস্থান পুরান ঢাকার ঋষিকেশ দাস রোডে।

বৈঠক সূত্র জানায়, ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপিত প্রস্তাবে রোজ গার্ডেনের ঐতিহাসিক দিক ও মালিকানাপরম্পরা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, ঋষিকেশ দাস নামের এক ধনাঢ্য ও শৌখিন ব্যবসায়ী ১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর এই বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। দোতলা এই বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের চারা লাগান তিনি। বাড়ির নাম রাখেন ‘রোজ গার্ডেন’৷ সাত হাজার বর্গফুট আয়তনের এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি জলসাঘর রয়েছে, যার মেঝে শ্বেতপাথরে তৈরি। বাড়ির সামনের অংশে শানবাঁধানো পুকুর।

কিন্তু বাড়িটি পুরোপুরি সাজিয়ে তোলার আগেই দেউলিয়া হয়ে যান ঋষিকেশ দাস। ঢাকার তখনকার এক পুস্তক ব্যবসায়ী কাজী আবদুর রশীদের
কাছে ১৯৩৬ সালে ওই সম্পত্তি বিক্রি করে দেন তিনি। আবদুর রশীদ সেখানে একটি পাঠাগার গড়ে তোলেন এবং রোজ গার্ডেনের নাম পাল্টে রাখেন ‘রশীদ মঞ্জিল’।

>১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়।

কাজী আবদুর রশীদের কাছ থেকে ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তাঁরই বড় ভাই কাজী হুমায়ুন বশীর। তিনি ১৯৭০ সালে বেঙ্গল স্টুডিওকে বাড়িটি ইজারা দেন। হারানো দিন নামের চলচ্চিত্রের শুটিং এই বাড়িতে হয়েছিল বলে জানা গেছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু আদালতে মামলা করে ১৯৯৩ সালে অধিকার ফিরে পান কাজী আবদুর রশীদের মেজ ছেলে কাজী আবদুর রকীব। ১৯৯৫ সালে মারা যান তিনি। এরপর থেকে তাঁর স্ত্রী লায়লা রকীবের মালিকানায় রয়েছে এই সম্পত্তি।

জানা গেছে, সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসায় ঢাকার খানদানি পরিবারগুলো তেমন পাত্তা দিত না ঋষিকেশ দাসকে। একবার তিনি জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর বাগানবাড়ি বলধা গার্ডেনের এক জলসায় গিয়ে অপমানিত হয়েছিলেন। এরপরই তিনি রোজ গার্ডেন তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ঐতিহাসিক জায়গা হিসেবে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষণ করা হবে। রূপ দেওয়া হবে জাদুঘরে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় শিগগির এ কাজ শুরু করবে।