বিউটি হত্যা: বাবাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

হবিগঞ্জের আলোচিত বিউটি আক্তার হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। রোববার জেলা মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে এ অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে ময়না মিয়া ও নিহত বিউটির বাবা সায়েদ আলীসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন পলাতক।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হবিগঞ্জের ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের নারী সদস্য কলম চান বিবি ও তাঁর ছেলে বাবুল মিয়াকে ফাঁসানোর জন্য নিজেরাই এ হত্যা ঘটান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। ।

হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আজ রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিউটি হত্যার অভিযোগপত্র দেওয়ার কথা জানান হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) বিধান ত্রিপুরা। বিধান ত্রিপুরা বলেন, এ আলোচিত হত্যাকাণ্ডে নিহত বিউটির বাবা সায়েদ আলী ও প্রতিবেশী ময়না মিয়াসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ময়না মিয়া ও সায়েদ আলী কারাগারে আছেন। অপর একজন পলাতক। এ দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। মূলত অভিযুক্তরা হবিগঞ্জের ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের নারী সদস্য কলম চান বিবি ও তাঁর ছেলে বাবুল মিয়াকে ফাঁসানোর জন্যই হত্যাকাণ্ড ঘটান।

বিধান ত্রিপুরা বলেন, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নবগঠিত ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন গত বছরে ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ৪,৫ ও ৬, ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী সদস্যপদে নির্বাচন করেন কলমচান বিবি ও একই গ্রামের ময়না মিয়ার স্ত্রী আছমা বেগম। নির্বাচনে কলম চান বিবি জয়ী হলেও এ দুই প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। কারণ আছমা বেগমের স্বামী ময়না মিয়া এ নির্বাচনের আগ থেকেই কলমচান বিবিকে অনুরোধ করে আসছিলেন তিনি যেন নির্বাচন না করেন। কিন্তু কলমচান বিবি এ অনুরোধ রক্ষা না করে নির্বাচন করেন এবং পরাজিত করেন ময়না মিয়ার স্ত্রীকে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি গত ২১ জানুয়ারি বিউটিকে অপহরণ করেন ওই নারী ইউপি সদস্য কলম চানবিবির ছেলে বাবুল মিয়া। সে দুই সপ্তাহ বিউটিকে বিভিন্ন স্থানে রেখে ধর্ষণ করে। পরে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। বাবুল ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। এ নিয়ে গ্রামে সালিস বৈঠকও হয়। তাতে কোনো সুরাহা হয়নি। এ ঘটনাটিকে কাজে লাগা ময়না মিয়া। তিনি ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ময়না মিয়া বিউটির বাবা সায়েদ আলীকে বুঝায় বিউটি নষ্ট হয়ে গেছে। ওকে বাড়িতে রাখলে তার অপর দুই মেয়ের ওপর এর প্রভাব পড়বে। ওই দুই মেয়েকে সে আর ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারবে না। বিউটিকে হত্যা করলে বাবুল ও তাঁর মাকে ফাঁসানো যাবে। এতে সম্মতি ও রাজি হন সায়েদ আলী। পরে ময়না মিয়া সায়েদ আলী ও অপর এক ব্যক্তি গত ১৬ মার্চ বিউটিকে তাঁর নানা বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। পরে তাঁরা লাখাই উপজেলার কোনো একটি স্থানে বিউটিকে হত্যা করে এ লাশ ওই দিন রাতে শায়েস্তাগঞ্জের ছাতা গর্ত হাওরে এনে ফেলে রাখেন।
পুলিশ সুপার বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজন হলেন ময়না মিয়া, সায়েদ আলী ও অপর একজন পেশাদার খুনি। এ খুনিকে তাঁরা ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া আনেন। প্রথমে অগ্রিম বাবদ দেওয়া হয় আড়াই হাজার টাকা। বাকি টাকা দেওয়া হয় এ হত্যাকাণ্ডের পর।

এসপি জানান, বিউটির বাবা দায়েরকৃত মামলাটি খারিজ করা হয়েছে। তবে এর আগে বাবুল মিয়ার ওপর ধর্ষণ মামলাটি প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে বিউটি ধর্ষণ মামলায় ২৪ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।