ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তিতে আপ্লুত স্বজনেরা

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে। ১৯ আগস্ট ২০১৮। ছবি: ইকবাল হোসেন, কেরানীগঞ্জ
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে। ১৯ আগস্ট ২০১৮। ছবি: ইকবাল হোসেন, কেরানীগঞ্জ

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান। কারাগারের ফটক পেরিয়ে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবা মাহমুদুর রহমান তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাহমুদুর বলেন, ‘আমার বাবাকে নিয়া আমি ঈদ করতে পারুম। এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছু নাই। আল্লাহ আমার পরিবারের ওপর রহম করেছে। এর চেয়ে বড় আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় সংঘাত, ভাঙচুর, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মুশফিকুর রহমান। বাড্ডা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের এই শিক্ষার্থীকে। মুশফিকুরের মতো আরও আট শিক্ষার্থী রোববার সন্ধ্যায় জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন। কাল সোমবার আরও ১৩ শিক্ষার্থী মুক্তি পাবেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অতিরিক্ত জেলার জাহিদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

৯ শিক্ষার্থীর কারাগার থেকে মুক্তির সংবাদ পেয়ে রোববার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় ভিড় জমান তাঁদের সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যরা। গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের জামিনে মুক্তির সংবাদ পেয়ে দুপুর থেকেই তাঁরা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন।

প্রিয়জনদের মুক্তির বিষয়ে জানতে ক্ষণে ক্ষণে কারাগারের সামনে থাকা কারারক্ষী ও সংবাদকর্মীদের কাছে প্রশ্ন রাখছিলেন স্বজন ও সহপাঠীরা। বিকেল চারটার পর থেকে কারাগারের বাইরের এলাকায় বন্দী শিক্ষার্থীদের পরিবার-পরিজন ও সহপাঠীদের ভিড় আরও বাড়তে থাকে।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৯ জন শিক্ষার্থী জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সহপাঠী ও পরিবারের সদস্যরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। মুক্তিপ্রাপ্ত আরেক শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের সহপাঠী এহসানুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বন্ধু নিরপরাধ ছিল। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে যে বন্ধুকে কাছে পেয়েছি। দুই দিন পরে ঈদ। আমরা ঈদে একসঙ্গে আনন্দ করতে পারব।’

ঢাকার থানা ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের সময় সংঘাত, ভাঙচুর, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ এ পর্যন্ত ৫১টি মামলায় ৯৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে ৫২ জন শিক্ষার্থী।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হয়। এরপর ঘাতক বাসচালকের শাস্তি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।