ছাগলের বিক্রি বেশি

গরুর পাশাপাশি ছাগলের প্রতিও ক্রেতাদের বিশেষ আকর্ষণ। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গাবতলী হাটে।  ছবি: প্রথম আলো
গরুর পাশাপাশি ছাগলের প্রতিও ক্রেতাদের বিশেষ আকর্ষণ। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গাবতলী হাটে। ছবি: প্রথম আলো

দেশে কোরবানির ঈদে গরুর চেয়ে ছাগল বিক্রি বেশি হয়। গরুর চেয়ে ছাগলের উৎপাদন দ্রুত বাড়ছে। ২০১৪ সাল থেকে আমদানি অনেক কমে এলেও এখনো বছরে দুই থেকে তিন লাখ গরু ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসে। কিন্তু চার বছর ধরে দেশে কোনো ছাগল আমদানি হয়নি। সরকারি হিসাবে এ বছর ৫০ লাখ গরু কোরবানি হবে। আর ছাগল কোরবানি হবে ৭০ লাখ।

বাংলাদেশের স্থানীয় জাত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল মানের দিক থেকে বিশ্বসেরা হিসেবে স্বীকৃত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) ২০১৫ সালের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বিশ্বের অন্যতম সেরা জাত। দেশে কোরবানির ঈদে বিক্রি হওয়া ছাগলের ৯০ শতাংশই এই বিশ্বসেরা জাতের। আন্তর্জাতিক বাজারে এই ছাগল অবশ্য কুষ্টিয়া গ্রেড হিসেবে পরিচিত। মূলত কুষ্টিয়া ও তার আশপাশের জেলায় এই ছাগলের লালন-পালন বেশি হয় বলে এই নামকরণ করা হয়েছে।

তবে সংখ্যার দিক থেকেও বাংলাদেশের ছাগল বিশ্বে পিছিয়ে নেই। ছাগল উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। আর ছাগলের মাংস উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ২০১৫ সালে ছিল পঞ্চম। এ বছর এই খাতে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। বিশ্বের যে পাঁচটি দেশে দ্রুত হারে ছাগল উৎপাদন বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একসময় দেশের কুষ্টিয়া ও এর আশপাশের চারটি জেলায় ছাগল লালন-পালন হতো। এখন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন উঁচু এলাকায় ছাগল পালন হচ্ছে।

এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাগল লালন-পালনকে আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। এই গবাদিপশুটি বছরে চারটি বাচ্চা দেয়। যত্ন নিয়ে লালন-পালন করতে পারলে কৃষকেরা ভালো লাভ পায়।’

তবে যে হারে উৎপাদন বাড়ছে, ছাগলের দাম সেই হারে কমছে না মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে কোরবানির ঈদের সময় ছাগলের দাম বেশ বেড়ে যায়। আমরা ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। সড়কে ও ফেরিতে যাতে গরু-ছাগলবাহী ট্রাকগুলো দ্রুত পারাপারের সুযোগ দেওয়া হয়, সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে লালন-পালন হওয়া ২ কোটি ৬০ লাখ ছাগলের মধ্যে বছরে বিক্রিযোগ্য হয় প্রায় ১ কোটি ছাগল। যার ৬০ থেকে ৭০ লাখ কোরবানির ঈদে বিক্রি হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে ছাগল লালন-পালন নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংস্থা ওয়েব ফাউন্ডেশন। তাদের হিসাবে শুধু চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও রাজশাহীতে ২০ হাজার খামারে প্রায় ৫০ লাখ ছাগল লালন-পালন করা হচ্ছে। এসব ছাগলের অধিকাংশই বাংলাদেশি জাত ব্ল্যাক বেঙ্গল।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ছাগল ও ভেড়া প্রজনন সমিতির সভাপতি হাসিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ফেসবুকে প্রায় ৬০ হাজার সদস্য রয়েছে। তারা হাটে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে ছাগল বিক্রি করছে। কোরবানির ছাগল পরিবহনের সমস্যা দূর হলে এবার কোরবানিতে কোথাও ছাগলের সংকট হবে না।’