আ.লীগে দ্বন্দ্ব, বিএনপিতে অস্বস্তি

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির (জাপা) দখলে ছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসনটি জাপা ছেড়ে দিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। এবার মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম আবদুল মান্নান। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। সঙ্গে আছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বও।

এদিকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি জয়ী হয়। এবার দলটিতে আছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ নিয়ে দলে অস্বস্তি আছে।

 আওয়ামী লীগে বিভক্তি

গত ১৭ আগস্ট হরিরামপুরে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আবদুর রবসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। সে ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা সাংসদ মমতাজের ওপর ক্ষুব্ধ।

সাংসদ ও সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ বেগম বলেন, গত পাঁচ বছরে নির্বাচনী এলাকায় সেতু, রাস্তাঘাট, পদ্মা নদীতে বাঁধ নির্মাণসহ শিক্ষার মানোন্নয়নে অনেক কাজ হয়েছে। ভোটার ও দলীয় নেতা-কর্মী নির্বাচনে তাঁকেই চান। হরিরামপুরের নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিশাল দল। এখানে ছোটখাটো ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী মাঠে আছেন। তিনি বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য মহাজোটের স্বার্থে জাপাকে আসনটি ছেড়ে দেন। তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিলে এবার তিনিই মনোনয়ন পাবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য সালাম চৌধুরী জোরেশোরে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। এ ছাড়া হরিরামপুর উপজেলায় দলের একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে আছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের আরেক নির্বাহী সদস্য মনির হোসেনও মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘দল এবং এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হলে আরও বড় পরিসরে এলাকার উন্নয়ন করার সুযোগ পাব।’

 বিএনপিতে অস্বস্তি

১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে সাবেক শিল্পমন্ত্রী শামসুল ইসলাম খান সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে তিনি মারা গেলে উপনির্বাচনে তাঁর ছেলে জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম খান নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি আফরোজা খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ নিয়ে দলে কোন্দল দেখা দেয়। জাপার আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন আফরোজা খান।

এবার দলের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন মঈনুল ইসলাম খান। মামলা ও গ্রেপ্তার-আতঙ্কের মধ্যেই তিনি কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। মঈনুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাবা টানা তিনবার সাংসদ থাকাকালে এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। ২০০৬ সালে এই আসনে উপনির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এবার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে তাঁর বিশ্বাস।

জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান এবারও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, দলের কিছু নেতার বিরোধিতার কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারেননি। তবে এবার দলীয় নেতা-কর্মীরা তাঁকেই চাচ্ছেন।

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল হুদা শাতিল ও সিঙ্গাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবিদুর রহমানও মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। সাইফুল হুদা বলেন, ‘তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যার সম্পর্ক রয়েছে, দল তাঁকেই মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস করি।’ আবিদুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি মাঠে আছেন।

 আশাবাদী জাপা নেতা

২০০৮ সালে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আবদুল মান্নান জয়ী হন। এবারও জোট থেকে তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে দাবি করেছেন জাপার এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। আবদুল মান্নান বলেন, আওয়ামী লীগ ও জাপার উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে তাঁকে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে সাংসদ মমতাজ বলেন, ‘মহাজোটগতভাবে জাপার কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। দলের নীতিনির্ধারকেরা এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবেন।’

 *আগামী পর্ব নাটোর–১ আসন নিয়ে