কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে নাব্যতা সংকট, দুর্ভোগে যাত্রীরা

পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট থাকায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। কাঁঠালবাড়ি ঘাট, ২৬ সেপ্টেম্বর। ছবি: অজয় কুন্ডু
পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট থাকায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। কাঁঠালবাড়ি ঘাট, ২৬ সেপ্টেম্বর। ছবি: অজয় কুন্ডু

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। এর ফলে চ্যানেল ঘুরতে ফেরিগুলো আটকে যাচ্ছে ডুবোচরে। এ অবস্থায় নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে ফেরি চলাচল। এতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের সহ মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ বরকত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই দিন ধরে খুব সমস্যায় আছি। লৌহজং পয়েন্টে ও চায়না চ্যানেলে নাব্যতা সংকট থাকায় ফেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে চায়না চ্যানেলে পানির গভীরতা মাত্র চার ফুট। এই পরিস্থিতিতে ফেরি চলাচল সম্ভব না। আমরা আজ (বুধবার) মিটিংয়ে এসব বিষয়ে কথা বলেছি। বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ চ্যানেল দুটোর মুখে খনন কাজ করে দিলে সমস্যার সমাধান হবে।’

লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ড্রেজিং কাজ চলমান থাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে নৌপথের সব ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে বুধবার সকাল ১০টা থেকে ছোট ও কে-টাইপ নিয়ে মোট পাঁচটি ফেরি স্বল্প যানবাহন নিয়ে চলাচল করে। কিন্তু ফেরিগুলো বারবার ডুবোচরে আটকে যাওয়ায় বুধবার বেলা দুইটা থেকে আবার ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে ঘাট কর্তৃপক্ষ।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মায় হঠাৎ পানি কমতে থাকায় দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। এ অবস্থায় ফেরিগুলো চ্যানেল পার হতে গেলে বারবার ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। তাই আমরা ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছি। এর আগেও মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল ফেরি চলাচল। পরে পরীক্ষামূলক কয়েকটি ফেরি ছাড়া হলে সেই ফেরিগুলো ডুবোচরে আটকে যায়।’

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের খননকাজের বিষয় জানতে চাইলে সালাম হোসেন আরও বলেন, ‘তারা কী করে, আমরা জানি না। তাদের কাজের হিসাব আমরা রাখি না। তারা ঠিকমতো কাজ করলে নৌপথে আর এই সমস্যা হতো না।’

নৌপথে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ একাধিক খননযন্ত্র বসিয়ে বালু অপসারণের কাজ করলেও কাঙ্ক্ষিত সমাধান আসছে না। ফলে বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একে অপরকে দুষছেন।

বিআইডব্লিটিএর ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাশরেকুল আরেফিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মায় পানি ক্রমেই কমছে আর চ্যানেলের মুখে এলে পলি জমা হচ্ছে। এক দিন পরপর নতুন করে ডুবোচর সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। আমরা আটটি খননযন্ত্র বসিয়ে প্রতিনিয়ত ড্রেজিং কাজ করছি। কিন্তু পরিস্থিতি মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।’

বেলা দুইটার দিকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ৪ নম্বর ঘাটে একটি ডাম্ব ও একটি কে-টাইপের ফেরি নোঙর করে রাখা। ঘাটের চারটি পয়েন্টে কোনো ফেরিতেই যানবাহন উঠতে দেখা যায়নি। ঘাটের চারটি সংযোগ সড়কেই ছোট-বড় যানবাহনের দীর্ঘ সারি ছিল।

বেলা তিনটার দিকে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ১ নম্বর ঘাটে বসে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক আবু বক্কর বলেন, ‘খুলনা থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় ঘাটে এসেছি। ফেরির কোনো দেখা পাইনি। যা দু-একটা আসে, তাতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। কী করব, বুঝতে পারছি না। যাত্রীরা এত সময় ঘাটে আটকা পড়ায় বারবার উত্তেজিত হয়ে উঠছে।’

চট্টগ্রামগামী ট্রাকের চালক আবু তালেব বলেন, ‘ঘাটে এসেছি সাত দিন। দুই দিন হলো সিরিয়ালে বসে আছি। কখন ফেরিতে উঠতে পারব, তা কেউ ঠিক করে বলছে না।’

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট কুসল কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটের অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঘাট। এভাবে ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় টার্মিনাল ও ঘাটের সংযোগ সড়কে যানবাহনের চাপ রয়েছে।’