'সিক বেডের' অনুমতি মেলেনি, বিভাগে পরীক্ষা দিলেন তরিকুল

তরিকুলকে হাতুড়িপেটা করছেন ছাত্রলীগের কর্মী আবদুল্লাহ আল মামুন ২ জুলাই বিকেলে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
তরিকুলকে হাতুড়িপেটা করছেন ছাত্রলীগের কর্মী আবদুল্লাহ আল মামুন ২ জুলাই বিকেলে। প্রথম আলো ফাইল ছবি

অসুস্থ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে বিশেষ ‘সিক বেডে’ পরীক্ষা দিতে চেয়েছিলেন তরিকুল ইসলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি মেলেনি। তাই আজ বুধবার অ্যাম্বুলেন্সে করে এসে নিজ বিভাগেই পরীক্ষা দিতে হলো তাঁকে। ঠিকমতো হাঁটতে না পারায় ক্র্যাচে ভর দিয়ে ও সহপাঠীদের সহায়তায় তিনি বিভাগে প্রবেশ করেন।

তরিকুলের সহপাঠী ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামের মাস্টার্স চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে শহীদুল্লাহ কলাভবনে নিজ বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তরিকুল বিভাগীয় সভাপতির কক্ষে কোনো রকমে পরীক্ষা দিয়েছেন। সেখানে সাময়িকভাবে তরিকুলের সহপাঠীরা বিছানাপত্রের ব্যবস্থা করেন। পরীক্ষা শেষ হতে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আরও অন্তত ছয়বার তাঁকে নিজ বিভাগে এসে এভাবেই পরীক্ষা দিতে হবে।

অসুস্থা শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখনো মাঝেমধ্যে পা দিয়ে রক্ত, পুঁজ বের হয়। বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারি না। বুধবার পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঘণ্টা তিনেক পরই পায়ে ব্যথা শুরু হয়। ফলে পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই চলে আসতে হয়েছে।’

ছাত্রলীগের হাতুড়িপেটায় আহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ছাত্রলীগের হাতুড়িপেটায় আহত হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম। প্রথম আলো ফাইল ছবি

এ ব্যাপারে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তরিকুল বিভাগের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে বসে পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন করেছিল। অনুমতি না মেলায় আমরা নিজ বিভাগেই তাঁর পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। অনুমতির ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীর ছোঁয়াচে রোগ থাকলে তাঁকে চিকিৎসাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে অনুমতি দেওয়া হয়। তরিকুলের বিষয়টি তেমন নয়, তাই চিকিৎসাকেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার আবেদনটি উপাচার্য দপ্তরে অনুমতি পায়নি। এ ক্ষেত্রে আমার কিছু করার নেই। তবে তরিকুল তার বিভাগে আবেদন করে নিজ বিভাগেই সিক বেডে পরীক্ষা দিতে পারে।’

মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘কেউ কি ইচ্ছা করে মেডিকেল সেন্টারে বসে পরীক্ষা দিতে চায়? যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ন্যূনতম দায়িত্ববোধ থাকবে বলে আমরা ভেবেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার আবেদন গ্রহণ করেনি। আমরা এখনো বিশ্বাস করি, তারা তরিকুলের অবস্থা বিবেচনা করে তার আবেদন অনুমোদন করবে।’

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের হাতুড়িপেটায় গুরুতর আহত হন তরিকুল। ঘটনার পর থেকে তিনি অসুস্থ। তাই মাস্টার্স চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে সেই সুবিধা দেয়নি।