২০ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর চলছে ৫টি ফেরি

পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। ছবি: অজয় কুন্ডু
পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। ছবি: অজয় কুন্ডু

পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট থাকায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। এই নৌপথে সচল ১৯টি ফেরির মধ্যে স্বল্প যানবাহন নিয়ে চলছে মাত্র ৫টি ফেরি। চাহিদা অনুসারে ফেরি না চলায় ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা থেকে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এই নৌপথের চলাচলকারীরা।

এদিকে নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট ও চায়না চ্যানেলে একাধিক ড্রেজার বসিয়ে খননকাজ চলমান থাকায় বুধবার বেলা ২টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। এরপর ঘাটে যানবাহনের চাপ কমাতে ঝুঁকি নিয়ে স্বল্প পরিসরে যানবাহন নিয়ে পদ্মায় চলাচল করছে ৫টি কে-টাইপ ও ছোট (ভিআইপি) ফেরি। তবে দিনের বেলায় স্বাভাবিক রয়েছে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্র জানায়, নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। এই চ্যানেলে ফেরি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হলে খোলা হয় অন্য একটি চ্যানেল। নতুন এই চ্যানেলটি পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে থাকায় এর নাম দেওয়া হয়েছে চায়না চ্যানেল। এই চ্যানেল ঘুরে ফেরিগুলো শিমুলিয়া যেতে সময় লাগে দ্বিগুণ। কিন্তু নতুন এই চ্যানেলটিতেও দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথটির দুই চ্যানেলেই নাব্যতা সংকট ভয়াবহ আকার নিলে ফেরি চলাচল সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ঘাট কর্তৃপক্ষ। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ চ্যানেলের মুখে একাধিক খননযন্ত্র বসিয়ে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করে। চ্যানেলে ড্রেজিং করে কিছুটা উন্নতি করা হলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কে-টাইপ ও ছোট (ভিআইপি) ফেরিগুলো স্বল্প পরিসরে যানবাহন নিয়ে চলাচল শুরু করে।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন বলেন, ‘ তিন-চার দিন ধরে আমরা খুব খারাপ সময় পার করছি। পদ্মায় পানি ক্রমেই কমছে। ফলে চ্যানেলের মুখে নাব্যতা সংকট লেগেই আছে। বর্তমানে আমাদের ফেরি কর্ণফুলী, ফরিদপুর, কুমিল্লা, কিশোরী ও কাকলি নামের পাঁচটি ফেরি স্বল্প পরিমাণে যানবাহন নিয়ে থেমে থেমে চলাচল করছে। ফলে ঘাট এলাকায় ছোট পরিবহন ও পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পারাপারের অপেক্ষায় আছে।’

বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটের চারটি সংযোগ সড়কেই রয়েছে যানবাহনের সারি। তবে টার্মিনাল কানায় কানায় ভর্তি রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকে। ঘাটের পন্টুনগুলোতে দেখা যায়নি কোনো ফেরি। চারটি ঘাটেই নোঙর করে রাখা ডাম্ব ও রো রো ফেরি। ফেরি না পেয়ে লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীদের চাপ ছিল বেশি।

চট্টগ্রামগামী ট্রাকের চালক বাবুল কাজী বলেন, ‘ঘাটে আজ ১১ দিন ধরে আটকা আছি। ঘাটের লোকেরা বলছে নাব্যতা সংকট থাকায় ফেরি ঠিকমতো চলে না। তাই আমাদের বিকল্প পথ ধরে যেতে বলছে। কিন্তু লাইন ভেঙে আমাদের বিকল্প পথ ধরে গেলে সঠিক গন্তব্যে যাওয়া সম্ভব না।’

মুন্সিগঞ্জগামী একটি মাইক্রোবাসের চালক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টায় ঘাটে এসেছি। ঘাটে যা ফেরি আসে তাতে ওঠা বড় দায়। ছোট ফেরি ঘাটে এলে ভিআইপি যারা তারা আগে চলে যাচ্ছে। আর আমরা সাধারণ মানুষ ঘাটে বসেই আছি। কখন ফেরিতে উঠতে পারব, তা বুঝতে পারছি না।’

ঢাকাগামী যাত্রী রাম্পা রানী বলেন, ‘মাদারীপুর থেকে বাসে ঘাটে আসি দুপুর ১২টায়। পরে এক ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকার পর একটি ফেরিতে ওঠার সুযোগ পাই। কিন্তু ফেরিটি টার্নিং পয়েন্টের চ্যানেলটি ঘুরতে গেলে ডুবোচরে আটকে যায়। এ কারণে শিমুলিয়া ঘাটে আসতে আমাদের দ্বিগুণ সময় ব্যয় হয়েছে।’

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট কুশল কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ৩ দিন ধরে ঘাটের অবস্থা বেশি খারাপ। ফেরি চলছেই না। যা দু–একটা চলে তা দিয়ে সব যানবাহন পারাপার করা সম্ভব নয়। ফেরি চলাচল ব্যাহত থাকায় টার্মিনাল ও ঘাটের সংযোগ সড়কে আটকা পড়েছে শতাধিক যানবাহন।

এদিকে ঘাটে কর্মরত বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, বিষয়টি নাব্যতা ও ড্রেজিংয়ের ওপর নির্ভর করবে।