রোমাঞ্চপ্রিয়দের টানছে 'দড়িপথ'

সিলেটের খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান। পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে সম্প্রতি চালু হওয়া দড়িপথ। গত সোমবার দুপুরে।  ছবি: আনিস মাহমুদ
সিলেটের খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান। পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে সম্প্রতি চালু হওয়া দড়িপথ। গত সোমবার দুপুরে। ছবি: আনিস মাহমুদ

উঁচু উঁচু সব গাছ। একটির সঙ্গে আরেক দড়ি দিয়ে বাঁধা। দড়িগুলো অনেকটা রজ্জুপথের (রোপওয়ে) মতো। সিলেটের খাদিম জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের জন্য এই ‘ট্রি অ্যাকটিভিটি’র ব্যবস্থা। নাম ‌‘দড়িপথ’।

বন বিভাগের সহব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের এই দড়িপথ রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। সিলেটেরই আরেক জাতীয় উদ্যান সাতছড়িতে ‌‘ট্রি অ্যাকটিভিটি’ প্রচলনের পর খাদিমনগরে দড়িপথ চালু করা হয়। এর আগেই অবশ্য এখানে ‘জিপ লাইনিং’, ‘তাঁবু বাস’, ‘ট্রেইল ট্রেকিং’ বা সাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সর্বশেষ সংযোজন এই দড়িপথ।

২০০৬ সালে খাদিমনগরকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। এই এলাকায় টিলা-বনভূমির বৈশিষ্ট্যের সন্ধান মেলে ১৯৫১-৫২ সালে পরিচালিত বন বিভাগের বিশেষ জরিপে। ওই সময়ই এটিকে উদ্যান হিসেবে সংরক্ষণের প্রস্তাব ছিল। অর্ধশত বছর পরে এসে সেই প্রস্তাব কার্যকর হলো। সিলেট অঞ্চলের সাতছড়ি ও লাউয়াছড়ার মতো খাদিমনগরও বন বিভাগের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় দেখভাল শুরু হয়।

খাদিমনগর উদ্যান সিলেট শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে চা-বাগান ও টিলাবেষ্টিত। অবস্থান সিলেট সদর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায়। আয়তন ১ হাজার ৬৭৬ দশমিক ৭৩ একর। উদ্যানটি বন বিভাগের অধীন সিলেট উত্তর রেঞ্জ-১ এবং খাদিমনগর বন বিটের আওতাভুক্ত।

বন বিট কার্যালয় সূত্র বলছে, খাদিমনগরের বন অনন্য বৈশিষ্ট্যের। রয়েছে ছয়টি চা-বাগান। বেত-বাঁশসহ বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং বিরল পশুপাখির আবাসস্থল এই উদ্যান। উদ্যানের একদিকে রয়েছে জালালাবাদ সেনানিবাস। বাকি তিন দিকে ছড়াগাং চা-বাগান, হবিবনগর চা-বাগান, বুরজান চা-বাগান, কালাগুল চা-বাগান, গুলনী চা–বাগান ও খাদিম চা-বাগান।

উদ্যানে প্রবেশমূল্য বাংলাদেশিদের জন্য ২৩ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ৫০০ টাকা। প্রবেশমূল্যের সঙ্গে দড়িপথের পাঁচটি ধাপের জন্য ১০০ টাকা দিতে হয়।

উদ্যান সহব্যবস্থাপনা কমিটির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল কাদের জানান, গত বছরের জানুয়ারি থেকে পর্যটকদের জন্য ধাপে ধাপে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে ছয় মাস আগে দড়িপথ তৈরি করা হয়েছে। দড়িপথ হওয়ার পর প্রতিদিনই দর্শনার্থী বাড়ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে বেসরকারি সংস্থা সিএনআরএস-এর ‘ট্রেল প্রকল্প’।

গত সোমবার গিয়ে দেখা যায়, দড়িপথ বেয়ে উদ্যানের উপরিভাগ পরিভ্রমণের মধ্য দিয়ে রোমাঞ্চ অনুভব করছেন অনেকেই। উদ্যানের বন বিট কার্যালয়ে একটি গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সিঁড়ি। সেখান দিয়ে দড়িপথে উঠতে হয়।

টানা দুই ঘণ্টা কসরত করে দড়িপথের রোমাঞ্চ নিয়ে ফিরছিলেন সিলেট এমসি কলেজ ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থী। বললেন, এখানে আবারও আসবেন।

তবে এই দড়িপথের কারণে সংরক্ষিত বনের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সংগঠনটির সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এটা সংরক্ষিত বন। পর্যটনকেন্দ্র নয়। মনে হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট স্থানে এসব হলে ভালো। ক্রমেই এসব বিস্তৃত হলে একসময় উদ্যানের স্বকীয়তা হারাতে পারে।

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আর এস এম মুনিরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের জন্য এ রকম ব্যবস্থা উদ্যানের নির্দিষ্ট স্থানেই করা হয়েছে। উদ্যানের সব রাইডই পরিবেশবান্ধব করা হয়েছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতি হয় এমন কিছু বানানো হয়নি।